Advertisement

চলচ্চিত্ররের নায়িকা অন্তঃসত্ত্বা মানেই কি শাকিব খান

আমি পাশেই ছিলাম ভাবী খুব কাঁদতেছিল।বুবলি বলার জন্যে সবাই চাপাচাপি করতেছিল। পাশ থেকে তখন অন্য একজন নিচু স্বরে কবুল বলে নাউজুবিল্লাহ!" বলে কেঁপে উঠলাম। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দ্বিতীয় কোনো আওয়াজ বা কৈফিয়ত চাওয়ার সুযোগ পেলাম না। শাহানার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে বললাম,"খবরদার, এইসব উল্টাপাল্টা কথা আর যেন না শুনি শাহানা ঠোঁট মুচড়ে বলল,"তোর বউ, তুই বোঝ। আমার এত ঠেকছে, হুহ!"সে আমার পাশের সীটে বসা। একটুখানি দূরে সরে গিয়ে জানালায় চোখ পাতল। গাড়ি চলছে উল্কার বেগে। বাড়ি ফিরছি, বউ নিয়ে। নতুন বিয়ে করা বউ। বউ আমার পাশেই বসা।

সম্পূর্ণ অচেনা একটা মেয়ে লালশাড়িতে, বহুদামী অলঙ্কারে আচ্ছাদিত ওর দেহ। শাড়ির আঁচলটা মাথার উপর টেনে রাখায় মুখ দেখতে পারছি না। উপরন্তু সেও বিপরীত দিকের জানালার দিকে চোখ পেতে রেখেছে। এই মেয়ে কবুল বলে নাই অথচ আজ রাতে ওর সাথেই বাসর হবে আমার?নাউজুবিল্লাহ! কী করব ভেবে পাচ্ছি না পেটের ভেতর গুড়গুড় করছিল। মাথায় নিকোটিনের নেশা চেপে গেলো। শাহানা এইটা কী বলল আমাকে? পাশ থেকে কোন মেয়ে কবুল বলছে? কারে আমি ঘরে নিয়ে যাচ্ছি।

লা ইলাহা ইল্লা আনতা...বজ্রপাতের সময় বাইরে থাকলে এই দোয়া পাঠ করি। বজ্রপাত শুরু হয়েছে ভেতরে। মেয়েটার দিকে আবারও তাকালাম। ইডেনের ছাত্রী। সদ্য অর্নাস শেষ করেছে। নিচের তলার আন্টি আমার আম্মার সাথে আঁতাত করে এই বিয়ের ঘটকালি করেছে। আন্টি এবং আম্মারা পেছনের গাড়িতে। গাড়ি থামিয়ে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে, "মেয়ে কবুল বলে নাই কেন? তখন তো খুব জোর গলায় বলেছিলেন, শান্তা খুব শান্ত মেয়ে। একেবারে লক্ষ্মী মেয়ে। হিজাব ছাড়া ফেক্সিলোডের দোকানেও যায় না।

ফেক্সিলোডওয়ালা আন্টির উপর রাগ বাড়ছে। নিজের উপরেও রাগ বাড়ছে। ঘরোয়াভাবে মেয়ে দেখা হয়েছে। বিয়ের আগে আমিও ওর বাসায় গিয়ে দেখে এসেছি। আলাদা ভাবে শান্তার সাথে বসার প্রস্তাব দুইপক্ষ থেকেই এসেছিল। আমিই বসতে চাইনি। মেয়ের বাবা সচিব। হজ্ব করা মানুষ। মেয়ের মা একটা স্কুলে পড়ায়। শান্তার পরিবার দেখেই আম্মা বশ হয়ে গেছেন। পাক্কা কথা দিয়ে ফেলেছিলেন। আলাদাভাবে বসলেও আমি কী কোনো ছুতায় এই বিয়ে ভাঙতে পারতাম? 

নাহ।তাই বসি নাই। বিয়ের পর বসবো ভেবেই কিছুটা রোমাঞ্চ বোধ করেছিলাম।ভেবেছিলাম, পার্কে কিংবা রেস্টুরেন্টে বসে নয়া বউয়ের ধার কমাবো কেন? একেবারে বাসর ঘরেই বন্ধ দরজার অন্যপাশে দুইজনে বসদেখবো যখন, ভালো করেই দেখবো। কিন্তু, কিন্তু... শাহানা এইটা কী বলল?রাজপথ ছাড়িয়ে গাড়ি আমাদের মহল্লায় প্রবেশ করলো। মহল্লা থেকে অল্প দূরেই বাসা। লালনীল মরিচবাতিতে সম্পূর্ণ রাস্তাটা আলোকিত হয়ে আছে। চড়া ভলিউমে গান বাজছে। বউ নিয়ে গাড়ি এসেছে টের পেয়েই অপেক্ষমান মানুষেরা ছুটে এসেছে।

গাড়ি থেকে নামলাম। শান্তাকেও হাতে ধরে নামানো হলো। শান্তার মাথা নিচু হয়ে আছে। অবাঞ্চিত শাড়ি ও গহনার ভারে জর্জরিত সে? নাকি অন্য কোনো ছেলের কথা ভাবছে? প্রেম ছিল আর কারও সাথে এইদিকে আমি, যুগজনমের কানা, যুগজনমের তৃষ্ণা আমার বুকে। সেই নাইন টেনে পড়ার সময় একটা মেয়েকে পছন্দ করেছিলাম। সে আমাকে ম্যান্দামারা বলে প্রত্যাখ্যান করেছিল। ভালো ছেলেরা, মানে অতিরিক্ত রকমের ভালো ছেলেরা কিছুটা ম্যান্দামারাই হয় বটে। মেয়েদের সাথে চটুল হাসির কথা বলে, চুটকি বাজিয়ে আড্ডা দিয়ে মুগ্ধ করার ক্ষমতা আমার ছিল না।

তবে বিশ্বাস ছিল, পড়াশোনা শেষ করে ভালো একটা জব পেলে, ভালো একটা মেয়ের দেহ ও মনের মালিকানা আমি নিশ্চয়ই পাব। নিজের দেহ এবং মনের মালিকানাও যে ওর জন্যে তুলে রেখেছিলাম আমি। ফেরার পর বধু-বরণ সংক্রান্ত আরও কিছু আনুষ্ঠানিকতা ছিল। খানাপিনার ব্যাপার ছিল।বন্ধু পিয়াস এবং হামীম এই পুরোটা সময়জুড়ে আমার সাথে ছিল আজ রাতের উত্তেজনাকর ঘটনাবলীর ইঙ্গিত করে আমাকে নিচু স্বরে একটু পরপর চটকাচ্ছিল,কী মাম্মা? খুব খুশি, তাই।

একেবারে কাঁপায়ে দিবা, অকে নিঃসন্দেহে অশ্লীল ইঙ্গিত। কিন্তু মনে যদি আমার দ্বিধা না থাকতো, এইগুলাও হয়তো এনজয় করতাম আজ। পারছিলাম না। শাহানার কথাটা, ছোট্ট একটা বাক্য, আমাকে একেবারে বিদ্ধ করে দিয়েছে। রাতে রাত তখন দেড়টা শান্তা বসে আছে, ফুলে ফুলে সাজানো ফুল শয্যায়... ঘরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিলাম আমি। পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম, শান্তার কাছে। বসলাম। শান্তা মুখ তুলে থাকালো। ওর গায়ে এখনও সেই রঙিন পাড়ের শাড়ি, স্বর্ণের অলঙ্কারে ঠাসা গলা, কান, নাক, কপাল...গলা ঝেড়ে কাশি দিলাম। উহুম, উহুম! শান্তা এইবার পূর্ণ চোখে তাকালো আমার দিকে। বললাম।

ভণিতা করে লাভ নেই। ফেরার পথে যেভাবেই হোক, একটা কথা আমার কানে এসেছে শান্তার চোখ জোড়া বড় হয়ে গেলো। কী সুন্দর, টলটলে জলভরা কালো চোখ! চোখের পাতায়, পাপড়িগুলো যেন গর্ভবর্তী মেঘ। নাকের চূড়ায় একটু একটু ঘাম জমেছে... আমার খুব লোভ হলো...অসমাপ্ত বাক্যটা শেষ করলাম না। শান্তা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে জানতে চাইল একবার মনে হলো জিজ্ঞেস করে দরকার নেই। এমন ডাগর চোখের, মায়াবী মুখের একটা মেয়েকে যদি হাতছাড়া করতে হয়, কেঁচো কুড়তে যদি একটা সাপ তবুও সাহস করে বলে ফেললাম,"বিয়েতে তুমি নাকি কবুল বলোনি।"শান্তা তাকিয়ে রইল। শীতল চোখে। আমি বললাম, ভয় পাবার দরকার নেই। উত্তর দাও।

শান্তা উত্তর দিল, সাপিনীর মতোই শান্ত স্বরে উত্তর দিলো হ্যাঁ। কী করবেন এখন আপনি প্রেম ছিল কারও সাথে? ছেলেটা কে চিনবেন না।নিজের প্রেমিককে পথে বসিয়ে আমাকে বিয়ে করলে কেন উপায় ছিল না। আব্বা বলেছে, বিয়েতে রাজি না হলে জবাই করে ফেলবে। প্রেমিক কী জেনে দরকার আছে কোনো? আপনাদের মতো এলিট কিছু নয়। গল্প কবিতা লিখে। ভিক্ষাবৃত্তি করে বেড়ায়.শান্তার নাকের ডগায় ঘামের বিন্দুগুলি আরও বেশি ঘন ও গভীর হচ্ছিল। রাগে ও অভিমানে কাঁপুনি শুরু হয়ে গেলো ওর দেহে।

জানতে চাইলাম,"আমাকে ঠকালে "আপনাকে ঠকাবো কেন? কি চান বলুন? বুক দেখবেন? জামা খুলি শান্ত কণ্ঠে বললাম,"আচ্ছা, খোল শান্তা বিশ্বাস করতে পারলো না আমার কথাটা। স্থির চোখে তাকিয়ে রইল। আমি হাত হাত বাড়িয়ে আহবান জানালাম,"এসো, তোমাকে ভেতরে বাইরে ব্যবচ্ছেদ করব আজ শান্তা কেঁপে উঠল। তাতে কিচ্ছু যায় আসে না আমার। এই মেয়ে এক কবি কিংবা লেখককে ভালোবেসেছিল। এর থেকেই বোঝা যায়, শান্তা একটা বোকা মেয়ে। বোকা ছাড়া কেউ ভাতেমরা কবি সাহিত্যিকদের সাথে প্রেম করে।

ফুলশয্যায় বসেই কল্পনা করছিলাম, ওর হাভাতে প্রেমিকটা নিশ্চয়ই এখন এই মধ্যরাতে কোন পার্কে কিংবা নিজের রুমেই ছেঁড়া একটা বিছানার উপর পা ছড়িয়ে বসে সস্তা বিড়ি টানছে আর নীরবে চোখের জল ফেলছে... বোকাচণ্ডের দল!প্রেমিকের কাছে ফেরত যেতে চাও? ব্যবস্থা করে দিব শান্তা ঘৃণায় কেঁপে উঠে বলল,"না, নাহ আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। এই মেয়ে বাবার ভয়ে নয়, নিজেই বিরক্ত হয়ে প্রেমিকের বুকে লাত্থি বসিয়েছে।

একটুখানি কাছে গিয়ে  মায়াবী স্বরে বললাম তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছি, কষ্ট নিও না। এসো, তোমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরার একটা সুযোগ দাও আমাকে। দীর্ঘ জীবনে কখনও কোন মেয়েকে জড়িয়ে ধরার সুযোগ পাই নি, আমি শুধু সিনেমা দেখেছি, আর কল্পনা করেছি আমার এই ঘোর লাগা স্বর শুনেই হয়তো শান্তার মায়া কিংবা দয়া হল। নরম স্বরে বলল,"আমি কিন্তু কবুল বলেই বিয়ে করছি তোমাকে। খোদার কসম।

বুকের উপর থেকে একটা পাথর যেনো নেমে গেলো। শান্তাকে আরও একটু কাছে নিয়ে আরও একটু ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে ধরে, ব্লাউজের বোতামে হাত দিলাম দুইশো মাইল দূরে নির্জন নদীর চড়ায় বসে একাকী এক যুবক বিড়ি টানছে তখন। নিজেকে শুয়ারের বাচ্চা বলে গালি দিচ্ছে আর হাউমাউ করে কাঁদতে গিয়ে খিকখিক করে হেসে উঠছে।

আমার প্রসব বেদনা শুরু হয়েছে ঘন্টা ছয়েক আগে। পানি ভেঙ্গে গিয়েছিল অনেক আগেই। প্রসব বেদনা যে কতটা কষ্টকর সেটা শুধুমাত্র যে মা সন্তান প্রসব করে সে ছাড়া আর কারো বোঝার কথা না। এই ভয়ংকর ব্যথা নিয়ে আমি ছয় ঘন্টা ধরে একটা নোংরা তোশকে শুয়ে আছি। আমার শাশুড়ি বেশ কিছুক্ষণ পরপর এসে আমাকে দেখে যাচ্ছেন। আর বারবার কটাক্ষ করে বলছেন উঠে হাঁটাহাঁটি করো না কেন ? তাহলেই তো বাচ্চা তাড়াতাড়ি নিচে নামে।

আমি কি বলবো আমার গায়ে এক ফোটা শক্তি নেই। কিছুক্ষণ পরপর ব্যথাটা প্রচন্ড গতিতে এসে আবার চলে যাচ্ছে। পরপর দুইবার চিৎকার করলাম "ও মাগো" বলে।আবার শাশুড়ি এসে বললেন এবার কি পাড়া-প্রতিবেশী জানাবে নাকি, আমরা কি মা হইনি না আমাকে কোন হসপিটালে নেয়া হয়নি এমনকি কোন ট্রেনিং প্রাপ্ত দাঈ কেও খবর দেয়া হয়নি ।এটা নাকি আমার শাশুড়ি নিজেই পারবে, উনি নাকি অনেক বাচ্চা ডেলিভারি নিজেই করেছেন। মাঝে মাঝে আমার পাঁচ বছরের মেয়ে চুমকি এসে জিজ্ঞেস করছে মা তুমি কাঁদছো কেন,কি হয়েছে আমি কি উত্তর দিবো জানিনা।



আমার শ্বশুর বাড়ির পরিবার বেশ প্রভাবশালী । আমার শশুর এলাকার চেয়ারম্যান। তার ছেলেও ভালো ব্যবসা করে। এত কিছু দেখেই বাবা-মা এখানে আমাকে বিয়ে দিয়েছিলেন। সত্যি বলতে কি আমি ভালই ছিলাম, সমস্যাটা শুরু হলো তখন যখন আমার প্রথম বাচ্চাটা মেয়ে হলো। তখন অবশ্য আমাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল, সুন্দরভাবে ডেলিভারি হয়েছিল, আমি একটা সুস্থ  কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছিলাম।  প্রথম সন্তান হওয়ার পরে দ্বিতীয়বার আর পেটে বাচ্চা আসছিল না। বারবার ডাক্তার দেখানোর পরেও কোন লাভ হয়নি। সব ডাক্তারই বলেছে, "কোন সমস্যা নেই" এখন আমি ডাক্তারদের কে কি করে বলবো যে আমার স্বামী বেশিরভাগ রাত বাইরে কাটায়। একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ খুব সুন্দর করে আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন কোন কোন সময় গুলোতে স্বামীর সঙ্গে থাকলে আল্লাহ পাকের রহমত যদি সাথে থাকে তাহলে পেটে বাচ্চা আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি কিন্তু আমার স্বামীর তো ঘরের চেয়ে বাইরের টান অনেক বেশি। 

যাক অবশেষে আমি দ্বিতীয়বার মা হতে চললাম। আমার যত্ন একটু বেড়ে গেল। এখানে যত্ন বেড়ে গেল মানে এই না যে আমাকে মুখে তুলে কেউ খাইয়ে দিচ্ছে, মানে হচ্ছে ভারী কাজ একটু কম করতে হচ্ছে । যেখানে কাজের লোক আছে তবুও আমাকে প্রায় সব কাজেই হাত লাগাতে হতো এখন এই প্রেশারটা কমেছে।

বাচ্চা পেটে আসার সাত মাসের মাথায় আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো একটা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এর মাঝে আর কখনো ডাক্তার দেখানো হয়নি। ওখান থেকে বলা হলো রক্ত পরীক্ষা, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, প্রস্রাব পরীক্ষা ইত্যাদি করার জন্য। একজন অল্প বয়সী মহিলা ডাক্তার খুব মিষ্টভাষী হয়ে কথাগুলো বললেন। কিন্তু উনার সাথে আমার স্বামী যে ব্যবহার করলো আমি তাতে হতবাক। আছেন তো টাকা কামানোর ধান্দায়‌। রক্ত আর প্রস্রাব এখানে কি কাজে লাগবে?ডাক্তার কোনমতে নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন।

দেখুন আপনার স্ত্রীর শরীরে রক্তের পরিমাণ কতটুকু আছে সেটা জানা খুব জরুরী আর তাছাড়া তার রক্তের গ্রুপটা জানাও তো প্রয়োজন আপনারা যেহেতু বলতে পারছেন না। প্রস্রাব পরীক্ষা আমরা এজন্যই করতে চাচ্ছি যদি কোন ইনফেকশন থাকে সেটা ধরা পড়ে যাবে, আরো অনেক কিছু আছে যেটা আপনি হয়তো বুঝতে পারবেন না আর আল্ট্রাসনোগ্রাফি তো লাগবেই নয়তো বুঝবেন কি করে, বাচ্চা কবে হবে, বাচ্চার পজিশন কি, বাচ্চা ভালো আছে নাকি নেই। আমি ডাক্তারের কথায় মুগ্ধ কিন্তু আমার স্বামী হলো না। সে তার দুর্ব্যবহার বহাল রাখলো।আপনি শুধু আল্ট্রাসনোগ্রাফি করেন আর কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা লাগবে না।বাধ্য হয়ে ডাক্তার শুধু আলট্রাসনোগ্রাফি লিখে দিলেন।  হয়তো উনি আর বাক-বিতণ্ডায় জড়াতে চাচ্ছিলেন না এটাই স্বাভাবিক।

কাগজ নিয়ে গেলাম আলট্রাসনোগ্রাফি রুমে। ওখানে একজন মধ্যবয়সী ডাক্তার আমার আল্ট্রা করলেন। আমাদেরকে বাইরে বসতে বললেন। পনেরো মিনিটের মাথায় রিপোর্ট হাতে পেলাম। আমার স্বামী বেশ বিচক্ষণতার সাথে একটা একটা করে অক্ষর পড়তে লাগলো যদিও আমি জানি সে এর অর্ধেক বুঝতে পারবে কিনা তা সন্দেহ আছে। তারপর অ্যাসিস্ট্যান্ট কে ডেকে বললো এই এদিকে আয় , এখানে বাচ্চা ছেলে না মেয়ে কোথায় লেখা আছে?অ্যাসিস্ট্যান্ট আমার হাজব্যান্ড কে আগে থেকেই চেনে ।তাই বেশি কথায় না গিয়ে বললো রিপোর্টে কখনো ছেলে না মেয়ে সেটা লেখা থাকে না, সেটা একমাত্র যেই ডাক্তার পরীক্ষা করেছে উনি বলতে পারবেন।

প্রায় ৫-৬ জনকে সরিয়ে দিয়ে আমার স্বামী  ডাক্তারের রুমে ঢুকে চিৎকার করে বললো বাচ্চা সম্বন্ধে তো কিছু বললেন না  আপনাকে রিপোর্ট দিয়েছি, বাকি কথাবার্তা আপনি যেই ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন নিয়ে এসেছেন তার কাছ থেকে জানবেন আপনিই বলুন,ছোটাছুটি করতে পারবো না বাচ্চা সুস্থ আছে, হার্টবিট ভালো আছে, পেটে পানির পরিমাণও ভালো তবে সমস্যা হচ্ছে বাচ্চা উল্টা, এমন অবস্থায় বাচ্চা অনেক সময় নিজের থেকে ঘুরে যায় মানে নরমাল পজিশনে চলে আসে, আপনাদের হাতে যেহেতু সময় আছে তাই চার সপ্তাহ পরে আবার এসে একটা আর্টাসনোগ্রাফি করিয়ে যাবেন

আমি কি আপনার কাছ থেকে ভাষণ শুনতে চেয়েছি আমি জানতে চাচ্ছি বাচ্চা ছেলে না মেয়ে, এটা এখানে লেখা নেই কেন এটা লেখার নিয়ম নেই কিন্তু আপনি তো জানেন বাচ্চা ছেলে না মেয়ে তাই না জানি কিন্তু এটা বলা যাবে না, নিয়মের মধ্যে পড়ে না আমাকে নিয়ম শেখাচ্ছেন জ্বী, আপনি দয়া করে বাইরে যান, শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবেন না।সত্যি বলতে কি আমার স্বামীর আচরণে লজ্জায় মাটিতে মিশে যাচ্ছিলাম।মুহূর্তে সে ফোন দিল তার বাবাকে। প্রায় ১৫-২০ টা ছেলে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘেরাও করলো, ডাক্তারকে প্রায় মারবে এমন অবস্থা। বাধ্য হয়ে ডাক্তার বললেন যে বাচ্চাটি একটি মেয়ে সন্তান।

শ্বশুর বাড়িতে যখন এই খবর জানাজানি হলো, আমার যত্ন বন্ধ  হয়ে গেল। আমি এসএসসি পাস করা একটা মেয়ে, এতোটুকু জানি যে গর্ভাবস্থায় ভারী কাজ করা নিষেধ। তারপরেও সমস্ত ভারী কাজের নির্দেশ গুলো আমার উপর এসে আগের মতো করে পড়ছিল। একদিন মিন মিন করে শাশুড়ি মাকে বললাম মা এখন তো আমি সন্তান সম্ভাবা এই কাজগুলো করলে আমার বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে।উনি প্রায় কটাক্ষ করে বললেন মেয়ের মার আবার আদিখ্যেতা। আমি ভারী পেট নিয়েই কাজ করতে লাগলাম । শরীর চলে না, পায়ে পানি চলে এসেছে, ইদানিং খুব বেশি রকম খিদে পায় কাউকে বলতেও পারি না, নিজের হাতে নিয়ে খেলে আবার সমস্যা।

ভারী কাজ করার দরুণ অথবা অন্য যেকোনো কারণেই হোক না কেন মাত্র ৩৪ সপ্তাহেই আমার প্রসব বেদনা উঠলো।ছয় ঘন্টা ধরে কাতরাচ্ছি। কি অসহ্য যন্ত্রণা আর পারছিনা। কাছে একটা মানুষ নেই যার হাত চেপে ধরে সান্ত্বনা খুঁজে নেব। প্রচন্ড ব্যথায় আমি চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করলাম। প্রচন্ড জোরে চিৎকার করে প্রায় অজ্ঞান হয়ে গেলাম, ছিড়ে ফেটে আমার বাচ্চা পৃথিবীতে তার আগমন ঘটালো।

চারপাশ রক্তে ভেসে গেছে যেন আমি রক্তের সাগরে ডুবে আছি। আমি শাশুড়ি মাকে চিৎকার করে ডাকতে লাগলাম কারণ আমার বাচ্চাটি বের হয়েছে কিন্তু জরায়ুর ফুলটি এখনো বের হয়নি, বাচ্চাটি কান্না করেনি , নিজের চেয়ে তখন বাচ্চার মায়া আমার বেশি। কেউ আসছে না, আমার মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে আমার চেয়ে অসহায় আর কেউ নেই। আমার বাচ্চাটি আমার পায়ের কাছে পড়ে আছে অর্ধেক ঝুলন্ত অবস্থায়। আচ্ছা আমার বাচ্চাটা কি বেঁচে আছে ?ওর কান্নার শব্দ তো শুনতে পাচ্ছি না।প্রায় মিনিট দশেক পরে আমার শাশুড়ি এলেন, হাঁফ ছেড়ে বললেন মরা বাচ্চা

আমার তখন প্রচন্ড  ব্লিডিং হচ্ছে। উনি আর আমার জা মিলে বেশি তোয়াক্কা না করে কিছু পুরাতন কাপড় দিয়ে আমাকে পরিষ্কার করে আমার মৃত বাচ্চা নিয়ে চলে গেলেন। আমাকে পরিষ্কার করলে কি হবে যেখানে প্রচন্ড গতিতে  ব্লিডিং হচ্ছে সেখানে মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আবার সবকিছু ভিজে গেল। আমার শরীর আস্তে আস্তে  নিস্তেজ হতে লাগলো, চোখে ঝাপসা দেখছি, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, বুঝতে পারছি মৃত্যু আসন্ন, মৃত বাচ্চা প্রসব করায় এবার আমি একটু খুশি নয়তো এই দুধের শিশুকে দেখার মত কেউ থাকতো না অন্যদিকে আমার বড় মেয়েটির জন্য বড় বেশি দুঃখ হচ্ছে, জানিনা আমি চলে যাবার পরে ওর কি হবে।