Advertisement

শীতকালে কেনো বিয়ে করে জেনে নিন এক নজরে


এই পর্যন্ত বিয়ের জন্য এক ডজন মেয়ের ছবি দেখানো হয়েছে সাদাতকে এছাড়াও সরাসরি ছয় টি মেয়ের সাথে সাক্ষাত হয়েছে তার। এদের মধ্যে এক জনকেও সাদাতের পছন্দ হয় নি। বিষয়টি এমন নয় এই মেয়েগুলো দেখা শোনায় ভাল না বরং সাদাতের মতে তারা প্রত্যেকেই বেশ ভাল ছিল তবুও এদের এক জনকেও ভাল লাগে নি তার আর এই ভাল না লাগার পেছনের কারণ একটাই সেটা হচ্ছে এই প্রতিটি মেয়েকেই সাদাতের কাছে নিতান্ত ছেলে মানুষ মনে হয়েছে ওদের প্রত্যেকের বুদ্ধিমত্তার স্তর খুবই সাধারণ এমন সরল ধীশক্তির মানুষের সাথে সাদাতের বোনাবোনি কখনই হবে না।

এখানে মজার কথা হচ্ছে সাদাতের আকর্ষণ যে বুদ্ধিমত্তার প্রতি সৌর্ন্দযের প্রতি নয় এই ব্যাপারটা সাদাত তার পরিবারকে কোন ভাবেই বোঝাতে পারে নি সাদাতের পরিবার সর্বদা সাদাতের জন্য একের পর এক সুন্দরী রমণী খুঁজে যাচ্ছে কিন্তু সাদাত লক্ষ্য করেছে যেই মেয়েগুলো যত বেশী সুন্দর তাদের বুদ্ধির মান তত কম। সাদাতের মতে সৌর্ন্দয আর বুদ্ধিমত্তা এই দুটো বিষয় একটি অপটির ব্যস্তানুপাতিক একটি বাড়লে যেন আরেকটি কমে।

আয়নার সামনে দাড়িয়ে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল সাদাত এই প্রথম কোন রকম জোড়াজড়ি ছাড়া নিজে থেকে একটি মেয়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে সে, সাদাতের ধারণা অনুযায়ী সে যেই মেয়েটির সাথে দেখা করতে যাচ্ছে সে খুবই বুদ্ধিমতী একজন মানুষ। সাদাতের এই ধারণাটা যে সত্যি হবে সেটা সাদাত একশ ভাগ নিশ্চিত আজ পর্যন্ত সাদাতের কোন অনুমান ভুল প্রমাণিত হয়।

নিজেকে স্যাপিওসেক্সুয়াল হিসেবে আখ্যায়িত করে আয়নায় নিজের মুখটা একবার দেখে নিল সাদাত, চুল দাড়ি দুটোই বড় হয়েছে মা এবং মামা দুজনই কাল থেকে সাদাতকে সেলুনে গিয়ে একটু ফ্রেস হয়ে আসতে বলছে, কিন্তু সাদাতের ধারণা মতে এখন সাদাত যেমন আছে আছে ঠিক এভাবেই দেখা করতে যাওয়াটাই ভাল। অতীব বুদ্ধিমান মানুষের সুন্দরের প্রতি আকর্ষণ থাকে না। বিষয়টি মাথায় আসতেই দুই হাত দিয়ে নিজের চুল গুলো আঁচরে নিল সাদাত তারপর সুন্দর করে সামনে ঘরে গিয়ে বসল।

কিছুক্ষণ পরেই সামনের ঘরে সাদাতের মামা ঢুকলেন, তিনি সাদাতকে সোফায় হেলান দিয়ে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞাস করলে মা বেশ বিরক্তি নিয়ে ভেতরের ঘরে চলে গেলেন মামার বিরক্তি দেখে মুচকি হাসল সাদাত মামা সর্বদা খুব অল্পতেই বিরক্ত হন মামাকে সাদাত ‘ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স নামক একটি বই পড়তে দিয়েছিল মামা সেটা পড়েছে বলে মনে হয় না বইটা পড়লে মামার এই অল্পতে বিরক্ত হবার বিষয়টার উন্নতি হত।

গাড়ির পেছনে মা এবং ছোট মামা বসেছেন সাদাত বসেছে সামনে ড্রাইভারের পাশের সিটে আজ বনানীতে একটি চাইনিজ রেস্তরায় মেয়ে দেখা দেখি হবে সাদাতের ইচ্ছে ছিল একা গিয়ে দেখা করে আসবে কিন্তু মামা এবং মা সেটাতে রাজি নন। তাদের ধারনা সাদাত দেখা করতে যাবে না অথবা কোন ঝামেলা পাকাবে। মেয়ের পক্ষ থেকেও নাকি কয়েকজন আসবেন সুতরাং এখানে সাদাতের অভিভাবকদেরকেও যেতে হবে এই বিষয়টি কেন জানি সাদাতের মন মত হল যদিও এটা নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয় সাদাত।

পেছন থেকে মায়ের প্রশ্ন শুনে এবার একটু ভয় পেল সাদাত কি উত্তর দেবে মাকে সেটা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেল সে। সামান্য সময় চুপ থেকে সাদাত বলল জানি নাসা দাতের প্রশ্ন শুনে মামা যেন বিদ্যুৎ এর শক খেয়ে বললেন জানিস না মানে সিভিতে দেখিস একদম কাঁচুমাচু হয়ে উত্তর করল সাদাত পেছনে তাকিয়েই অনুভব করল মা এবং মামা দুজনে রাগে কিড়মিড় করছে, পর মুহূর্তেই ফিসফিস করে মামার গলার আওয়াজও শুনতে পেল সে তোমার ছেলের বিয়ে করার ইচ্ছা নাই বুঝলা।

কথাটা শুনে না শোনার ভান করে সাদাত মনেমনে হাসল সাদাত ইচ্ছে করেই মেয়েটির সিভি দেখেনি, এমনকি মেয়ের সম্পর্কে কোন খোঁজ খবরও নেয় নি। সাদাত খুব ভাল করেই ধারণা করছে এই মেয়ে সাদাতের সম্পর্কে সমস্ত কিছুই জানে সাদাতকে নিয়ে তার পূর্ণ গবেষণা করা হয়ে গেছে মেয়েটি সাদাতের সমস্ত তথ্য আগে জেনেছে তারপর নিজের ছবি আর সিভি দিয়েছে। এই জন্যই সাদাত ইচ্ছে করেই কোন কোন খবর নেয় নি একই কাজ দুই জনের করার কোন মানে হয় না সাদাতের যা জানার সেটা সে সময় হলেই জেনে যাবে।

সাদাত ঘড়ির দিকে তাকাল বনানী পৌঁছতে আর মিনিট বিশ সময় লাগবে সাদাত সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিঃশব্দে বিড়বিড় করে বলল ল্যাচেসিস মিউটা ধারণত চাইনিজ রেস্তোরা গুলোতে আলো কম হলেও এই চাইনিজ রেস্তোরাটা বেশ উজ্জ্বল দরজা দিয়ে ঢুকে হাতের ডানে লম্বা লবি লবির দুই পাশেই সাজানো টেবিল, এক একটি টেবিলে চারটি করে বসার চেয়ার দেয়া আছে। সাদাত একটু সামনে তাকাতেই লক্ষ্য করল লবির একদম শেষে দুটো টেবিল পাশাপাশি লাগিয়ে আট জনের বসার বন্দোবস্ত করা আছে সেই টেবিলের এক পাশে চার জন মানুষ বসে আছেন এই চার জনের মধ্যে দুজন নারী আর দুই জন পুরুষ দুই নারীর মধ্যে একজন ফাহমিদা।

মা এবং মামার সাথে সোজা টেবিলের কাছে হেটে গেল সাদাত টেবিলর কাছে আসতেই উঠে দাঁড়াল সবাই ওদের মধ্যে হতে একজন সাদাতের মামাকে উদ্দেশ্য করে বলল বাবলু ভাই শেষ পর্যন্ত আসতে পেরেছেন। আসতে কোন সমস্যা হয় না কোন সমস্যা হয়  রাস্তা ফাঁকা ছিল সরল উত্তর দিলেন সাদাতের মামা।আপনারা বসুন পাশ থেকে একজন ভদ্র লোক সবাইকে টেবিলে বসার অনুরধ করতেই তার দিকে একনজর তাকাল সাদাত তার পর সকলের সাথে বসে পড়ল সে।

কিছুটা সময় যেতেই সকলের সাথে পরিচয় পর্ব শেষ করে নিল সবাই প্রথম যেই লোকটা সাদাতের মামার সাথে কথা বললেন তিনি এখানে ঘটক মামার সাথে তার ঘটক হিসেবেই পরিচয় একদম হাতের ডানে বসেছেন তিনি। যিনি সবাইকে বসতে বলেছিলেন তিনি হচ্ছে মেয়ের বাবা তিনি ঘটকের পাশের চেয়ারটিতে বসেছেন মেয়ের বাবার পাশে যেই মহিলাটি বসে আছেন তিনি হচ্ছেন মেয়ের মা মেয়ে বসেছে মায়ের পাশে একদম বাম পাশের কোনার চেয়ারটিতে। মেয়েটির সাথে বাবা-মা দুই জনেরই চেহারার মিল রয়েছে, বাম পাশের গালে মা-মেয়ের দুজনেরই তিল আছে। অন্যদিকে মেয়ের চোখ গুলো হয়েছে তার বাবার মতন দুজনেরই জোড়া ভ্রু। একদম পিউর জেনেটিক কম্বিনেশনশুধু সমস্যা একটাই মেয়ের চেহারার বুদ্ধিদিপ্ততা বাবা মার কারো মধ্যেই নেই যদিও এটা তেমন কিছু না সাদাতের মাও একদম সরল একজন মানুষ সেই তুলনায় সাদাত অনেক চতুর।

বাবা তোমার কোন সমস্যা হচ্ছে না তো একদম চুপ চাপ যে অনেক কথোপকথনের মাঝে হঠাৎ সাদতকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বললেন মেয়ের বাবা। তোমারা একটু আলাদা আলোচনা কর নাকি আমাদের মুরুব্বিদের মধ্যে থাকলে তো একটু অন্য রকম লাগবেই। বেশ হাসি মুখে কথাটা বললেন মেয়ের বাবা। কথাটা শুনতেই বাবলু মামা সেটাতে বেশ জোড় সায় দিলেন এই সাদাত তোরা নিজেরা একটু গল্প কর ওই যে ওই টেবিলটায় গিয়ে বোস।

এমন পরিস্থিতিতে সামান্য অপ্রস্তুত হলেও কিছুক্ষণ পরেই নিজেকে অন্য একটি টেবিলে আবিষ্কার করল সাদাত সাদাত দেখল তার সামনে নিশ্চুপ হয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে একটি মেয়ে বসে আছে যেন লজ্জায় কোন কথাই বলতে পারছে না মেয়েটি। বেশ খানিকটা সময় চুপ করে থাকার পর মুখ খুলল সাদাত।

আপনাকে কি নামে ডাকব মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে প্রথমেই এই প্রশ্নটাই করল সাদাত। সাদাতের প্রশ্নে মাথা উঁচু করে তার দিকে তাকাল মেয়েটি মেয়েটির চোখে চোখ পড়ল তার সঙ্গে সঙ্গে যেন বুকের মধ্যে একটা শিহরন অনুভব করল সাদাত মনে মনে বলল বাহ কি বুদ্ধিদীপ্ত চোখ আপনার।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে জিনম রিসার্চে মাস্টার্স ডিগ্রি নিতে আসলেও টপ র‍্যাঙ্কারদের মধ্যে নাজমুস সাদাতের নাম নেই। মাস্টার্স ডিগ্রি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পি.এইচ.ডি করার সুযোগ পেয়েছে তাদের মধ্যেও নাম নেই এই ছেলের। এছাড়াও নেই কোন টিচিং এসিস্টেন্টশিপ নেই কোন ফেলোশিপ স্কলারশিপ! একেবারে সাদামাটা একজন স্টুডেন্ট এই নাজমুস সাদাত যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন মতে মাস্টার্স ডিগ্রি শেষে নিজ দেশে ফিরে গেছে।

নাজমুস সাদাতের ফাইলের মধ্যে থেকে একাডেমিক অংশটি দেখার পর মাথাটা কিছুক্ষণের জন্য কাজ করা বন্ধ করে দিল জনের বিশ্বের টপ র‍্যাঙ্কিং বিশ্ববিদ্যালয়ের টপ স্কোর ছাত্র-ছাত্রী ইলামিনার মতন কোম্পানিতে চাকরী পাবার জন্য যেখানে মুখিয়ে আছে সেখানে এমন সাধারণ একটি ছেলেকে হাইয়ার করা নিয়ে এমন একটি মিটিং ডাকা হয়েছে সেটা আসলেই বোধগম্য হচ্ছে না। ডাঃ মেনডেল আর লুইসের উপড়েও সামান্য বিরক্তবোধ করল জন এমন একজন স্টুডেন্টকে নিয়ে এত সার্কাস করার কি আছে।

নিজের ভেতরের বিরক্তিটা এবার প্রকাশ না করে থাকতে পারল না জন মেনডেল আর লুইসের দিকে তাকিয়ে হাতের ফাইলটা টেবিলে রেখে দিয়ে বলল কি চাইছ তোমরা বল তো এই ফাইল দেখে আমি তো কিছুই আন্দাজ করতে পারছি 

মরা কিছুই চাইছি না জন সবটা চাওয়াই কোম্পানির উদ্দেশ্যে জনের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে জবাব দিল লুইস। উফ ভণিতা করো না তো? যা বলার সরাসরি বল এই নাজমুস সাদাতকে নিয়ে কাহিনীটা কি জনের কথার উত্তরে এবার ডাঃ মেনডেলের দিকে তাকাল লুইস তার তাকানোর ভঙ্গি দেখেই মেনডেন বুঝতে পারল লুইস চাইছে কথার সূচনাটা যেন সেই করে।

জন তুমি তো খুব ভাল করেই জান বিশ্বের নামকারা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে আমরা প্রতি বছর কি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে থাকি শুধু মাত্র এই ট্যালেন্ট হান্টিং এর উদ্দেশ্যে। টিচার এসোসিয়েশন কালচারাল সোসাইটি স্কলারশিপ ফান্ডিং সহ সকল ক্ষেত্রে আমদের লক্ষ্য লক্ষ্য ডলার ব্যয় আর নজরদারির একটিই উদ্দেশ্য যেন কোন মেধাবী আমাদের চোখের আড়ালে না রয়ে যায় মেধাবীরা যেন কোন ভাবেই আমাদের নজর থেকে ছুটে যেতে না পারে

মেনডেলের কথায় এবার দৃষ্টি সূক্ষ্ম করে তার দিকে মনোযোগ নিবেশ করল জন সেই সাথে তার কথায় সহমত প্রকাশ করল সে।যদিও এই ট্যালেন্ট হান্টিং এর পেছনে অর্থ খরচ করার সুফল আমরা বহু গুণে পেয়ে গেছি কি বল লুইস মেনডেলের প্রশ্নে মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক ইঙ্গিত করল লুইস।

সত্যি বলতে কি মেধাবীদেরকে আসলে ওই পরীক্ষার খাতার নম্বরে কোন দিনও যাচাই করা সম্ভব নয় ওদেরকে তুমি পরীক্ষার দৌড়ে কখনই বিচার করতে পারবে না। কথাটা বলেই সামান্য সময়ের জন্য ঠোঁট ওলটালো মেনডেল।

‘আমরা সবাই খুব ভাল করেই জানি ওয়ার্ড র‍্যাঙ্কিং ভার্সিটি গুলোর এডমিশন পরীক্ষা আর প্রসেস কতটা কঠিন এই ভার্সিটি গুলোতে চান্স পাবার পর ভেতরকার যত পরীক্ষা হয় তার থেকেও সেখানে এডমিশন নেয়াটা অনেক বেশী কঠিন হয়। এর কারণ একটাই ওরা সর্বদা ভালদেরকেই নির্বাচন করে এই ব্যাপারে ওরা খুবই কঠোর কারণ ওরা ভাল করেই জানে ক্রিম গুলোকে নিতে পারলে কেকটা ভালই হবে। এটা যদিও আমাদের জন্য ভাল আমাদের কাজটা ওরাই অনেকটা এগিয়ে রাখে।

নাজমুস সাদাতের একাডেমিক রেজাল্ট দেখে তুমি সামান্য হতাশ হয়েছ, তুমি কি আরেকবার ফাইলটা নেবে, সেখানে মিঃ সাদাতের একাডেমিক রেজাল্টের একটি পাতা পরেই তার এডমিশন র‍্যাঙ্কিং এর পাতাটা রয়েছে তুমি কি সেটা একবার দেখতে পার

মেনডেলের কথা শেষ হতেই তৃতীয় বারের মতন ফাইলটা হাতে নিল জন তারপর পাতা উল্টে এডমিশন র‍্যাঙ্কিং এর পৃষ্ঠায় চলে গেল সেখানে নাজমুস সাদাতের নামটা খুঁজে পেতে খুব একটা দেরী হল না তার সেখানে প্রথম নামটাই নাজমুস সাদাতের এবার জন বেশ বিচলিত হয়ে গেল চোখে বিস্ময় নিয়ে সে মেনডেলের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল

ইয়েস তুমি ঠিক ধরেছ এই ছেলে এডমিশন পরীক্ষায় প্রথম ছিল কথাটা শেষ করে নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল ডাঃ মেনডেল তারপর হেটে কফি মেশিনের দিকে চলে গেল কেটলি থেকে এক মগ কফি ঢালতে ঢালতে খুব শক্ত আর আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে বলল

যেই ছেলেটা জিনম রিসার্চের মতন সাবজেক্টে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এডমিশন পরীক্ষায় প্রথম হল সেই ছেলেটা সেখানে অধ্যায়নরত থাকা অবস্থায় এমন সাদামাটা এবার দিয়ে মোট এগারবার ফাইলটা রেডি করেছে সে । কিন্তু প্রতিবারেই কোনো না কোনো একটা ভুল খুঁজে বের করেছেন বড়সাহেব। তৌহিদ মোটামুটি প্রস্তুত হয়ে আছে, যদি ফাইলটা মুখের দিকে ছুঁড়ে মারে কিভাবে নিজেকে সেভ করা যাবে। 

এরই মাঝে পকেটে থাকা মোবাইল ফোন শো-শো করে বেজে উঠলো। পাওয়ার বাটনে ক্লিক করে সাউন্ড অফ করে চুপচাপ রইলো সে। ফাইলের সমস্ত পাতা স্যারের দেখা শেষ হয়েছে। এখনো বকাবকি করেননি। চোখতুলে একবার তৌহিদের দিকে তাকিয়ে সিগনেচার করে দিলেন। তাকানোর ভাব'টা এমন যেন তৌহিদ অসম্ভব কিছু সম্ভব করেছে। কিন্তু কিভাবে।

তৌহিদ বাহিরে এসে ফোন বের করলো। ততক্ষণে আরো দু'বার কল এসেছে। কল করেছে রুবা, তার হবু স্রী। কল ব্যাক করেই কড়া কন্ঠে তৌহিদ বললো এই একবার কল রিসিভ না করলে বারবার কল করো কেন বুঝতে পারো না আমি ব্যস্ত আছি। ফোন কেটে দিলো। একটু রাগ দেখাতে গিয়ে ব্যাপার'টা উল্টো ঘটে গেলো। তৌহিদ নিজ ডেস্কের চেয়ারে বসে পিঠটা এলিয়ে দিলো। তার মনে হচ্ছে তার মাথায় মস্তবড় বোঝা চাপানো ছিলো কিন্তু এখন নেই একদম ফাঁকা।

খানিকবাদে রুবাকে কল দিলো সে। ফোন রিসিভ হচ্ছে না বারবার কেটে দিচ্ছে। আজ বিকাল ৪ টায় রুবার সাথে দেখা করার কথা ছিলো তার। রুবা বলেছিলো জরুরি কথা আছে। সামনাসামনি বলতে হবে। আধাঘন্টা লেট। অফিস থেকে দ্রুত বের হয়ে বাইকে চেপে ছুটলো সে। মাঝরাস্তায় ফোন বেজে উঠলো। ছোটবোন তিথি ফোন করেছে। ভাইয়া কই তুই তাড়াতাড়ি বাড়িতে আয়। বেশি ব্যাথা হাসপাতালে নিতে হবে আমি বুঝতেছি না। আব্বু বিছানায় ছটফট করছে আর কাঁদছে। তাড়াতাড়ি আয়। তৌহিদ একজন ডাক্তার নিয়ে বাড়িতে গেলো। ডাক্তার বললেন, ব্যাথা কি নতুন নাকি আগে থেকেই।

মাঝেমাঝে হয়। ট্যাবলেট খান সেড়ে যায়। আজকে বেশি ব্যাথা। ডাক্তার স্যালাইন আর পেইন কিলার ইনজেকশন দিয়ে বললেন কিছু ঔষুধ দিচ্ছি, এনে খাওয়ান। ব্যাথা আপাতত কমে যাবে। তবে রোগীকে অতি দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে পেট এক্স করে দেখা দরকার।  অবস্থা অবনতি হলে আজই নিয়ে যাবো। 

ডাক্তার চলে গেলেন। ব্যাথা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তৌহিদ তার ঘরে গিয়ে রুবাকে ফোন দিলো।আসতে পারলাম না। তুমি বাড়ি যাও। হঠাৎ কর হঠাৎ করে কি কাজ পড়ে গেলো ঠিক আছে, আমি যাচ্ছি। দেখা করার দরকার নেই। কথা শোনারও দরকার নেই। বিয়ে করারও দরকার নেই। কাজ নিয়েই থাকো। আমি বাড়িতে বলে দিবো আমরা বিয়ে করছি না।

রাতের মধ্যে ব্যাথা বেড়ে গেলে বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো তৌহিদ। পরেরদিন এক্সরে করে ডাক্তার বললেন কিডনি'তে পাথর হয়েছে। অবস্থা যথেষ্ট অনুকূল না তাড়াতাড়ি অপারেশন করাই ভালো। ডাক্তারের কথা অনুযায়ী সেভাবেই আগানো হলো। অন্যান্য প্রয়োজনীয় টেস্ট শেষে শুক্রবার সকালে অপারেশনের ডেট ফিক্সড হলো। 

রবিবার তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। বিয়ের ডেট পেছানো হলো। বাবা অসুস্থ একেই মানসিক অশান্তি তার মধ্যে অফিসে গেলে ছোটছোট কারণে বড়সাহেবের ঝাঁড়িঝুরি। 

বাবার পাশে বসে তৌহিদ মনে মনে ভাবছিলো বাবা সুস্থ হলে এই চাকুরিটা ছেড়ে দিবে সে। এই চাকুরি করার থেকে ফুটপাতে চা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করা ভালো। কারো হুকুম মেনে অন্তত চলতে তো হবে না কটা বিষয়ে বলার ছিলো। আপনি ঝামেলার মধ্যে আছেন বলাটা ঠিক হবে কিনা বুঝতেছি না। বুধবার আমাদের সংগঠনের ৬ষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিবার তো আপনি অ্যাংকরিং করতেন। সময় করে বুধবার যদি সন্ধ্যায় আসতেন।

মামা আসলে তৌহিদ বের হলো। যাওয়ার সময় রুবার জন্য ফুচকা নিলো মেয়েটার ভীষণ পছন্দ ফুচকা। বাইক চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝপথে বৃষ্টি শুরু হলো। গা ভিজে যাচ্ছে, তৌহিদ বৃষ্টিতে ভিজেই যাচ্ছিলো। খানিকবাদে শাখা রাস্তা থেকে মেইন রাস্তায় উঠার সময় বাঁ-দিক আসা দ্রুতগামী বাসের সাথে সংঘর্ষ লেগে গেল তার বাইকের। তৌহিদ ছিটকে গিয়ে ল্যাম্পপোস্টের সঙ্গে বারি খেলো। মাথায় হেলমেট ছিলো না। শক্ত আঘাতে মাথা ফেটে গেছে। রক্ত পড়ছে। হাত ভেঙ্গে গেছে। মুহূর্তেই লোক জড়ো হয়ে হায়! হায় শোরগোল বেঁধে গেলো। এটা কি হলো জোয়ান ছেলে বেশ জখম হয়েছে। মনে হয় না বাঁচবে।


কজন মানুষ তড়িঘড়ি করে তৌহিদ'কে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিলো। দায়িত্বরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করলো। ব্যস্তময় জীবনের ইতি ঘটে গেলো সেখানেই। বাবার অসময়ে পাশে থাকা কিংবা প্রিয় মানুষটিকে আরো আপন করে পাওয়া কোনটাই হলো না। 

তাই বলে পৃথিবী থেমে থাকবে না। ঠিকই বাবার চিকিৎসা হবে, রুবার অন্য কোথাও বিয়েও হবে। বড়সাহেব তৌহিদের জায়গায় অন্য একজনকে নিয়োগ দিয়ে দিবেন। এমনকি সংগঠনের প্রতিষ্টাবার্ষিকীও থেমে থাকবে না তৌহিদের অপেক্ষায়। একটু আগেই যার এতো প্রয়োজনীয়তা ছিলো এক মুহূর্তেই শেষ।

জীবন অনেকটা কুচুরিপানা ভর্তি পুকুরে ঢিল ছোঁড়ার মতো। ঢিলের শক্তি মন্থর হলেই কুচুরিপানা আবার এক হয়ে যাবে। সবাই ভুলে যাবে ঢিলের গুরুত্ব। যেমনভাবে আপনার মৃত্যুতে আপনার প্রয়োজনীয়তারও অবসান হয়েছে। কিছুই থেমে থাকবে না। সব চলবে আপন গতিতে। শুধু আপনিই থাকবেন না।

মোটরসাইকেল শুধুমাত্র বাহন হিসেবেই ব্যবহার করুন। এটাকে রেসের ঘোড়া বানিয়ে জীবনটাকে স্ব-হস্তে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দিয়েন না। যদিও মৃত্যু অনিবার্য তবু অস্বাভাবিক মৃত্যু আপনার আপনজনকে অনেক অনেক ব্যথিত করে। ভালো হেলমেট পরিধান করুন। পিছনে বসা লোকটিকেও হেলমেট পরিধানে উৎসাহিত।