Advertisement

কিভাবে অনলাইন থেকে খুব সহজেই ইনকাম করা যায়


অনলাইন থেকে খুব সহজেই ইনকাম


মিটিয়ে ভদ্রতাসুলভ ধন্যবাদ জ্ঞাপনের ইচ্ছাটুকুও লোপ পেয়েছে বিধেয় কিছু না বলেই রিকশায় উঠলাম। ঔষধটা বুক পকেট-এ রেখে মোবাইলটা হাতে নিতেই রাগের মাত্রাটা তীব্রতর হলো। এক অপরিচিত নম্বর থেকে ছয় বার কল এসেছিলো সাথে একটা ক্ষুদেবার্তা। কল দিলাম নম্বর বন্ধ ক্ষুদেবার্তাটায় চোখ আটকে গেলো আমি আব্দুস সামাদ তোমার ছোটবেলার স্যার। সময় পেলে একটু দেখা করিও।


বাড়িতে ফিরেও কল দিলাম ফোন বন্ধই। চিন্তা পিছু ছাড়ছেই না কোনভাবে। স্যার হঠাৎ এতদিন পর আত্মজিজ্ঞাসা ক্রমাগত বেড়েই চললো কোন সমাধানের প্রতিশ্রুতি ছাড়াই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক। বেত যুগের শিক্ষার্থী হওয়ার সুবাদে উনার ভয়ংকর শাসন দেখার দুর্ভাগ্য হয়েছে অনেক বারই। বেত্রাঘাতের অসহনীয় অবস্থার কিছুটা প্রশান্তি মিলতো মধ্যবিরতীতে উনার পক্ষ থেকে চকলেট প্রদানের মধ্য দিয়ে।


তবে স্যারকে সবচেয়ে বেশি মনে আছে সেটা হলো-আমাদের জন্য সহজে ইংরেজি শেখানোর জন্য বিভিন্ন কৌশল প্রদর্শন। যা পরবর্তীতে পান্ডুলিপি আকারে বিভিন্ন স্কুলে স্কুলে নিজ খরচে ফেরীওয়ালার মতো বিলি করতেন অবসরের পরেও। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের সংজ্ঞানুযায়ী সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, প্রয়োজনে মিশুক অপ্রয়োজনে গম্ভীর শরীরে হালকা সবুজ পাঞ্জাবীর আবর্তন উজ্জ্বল শ্যামের সংকরায়ণ পুরুষোভিত গোফ সব মিলিয়ে ভয়ংকর আদর্শিক সৌন্দর্য্যের বাস্তব উপমা। স্যারকে শেষবার অনেক সময় দেখেছিলাম উনার বিদায় বেলায় তখন আমি স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। কাঁদতেও দেখেছিলাম সেদিনই প্রথম। শেষ কথাগুলো এখনোও মনে আছে বেশ।


ফ্রি টাকা ইনকাম

সরকার শুধুমাত্র আমাদের সময়ের হাজিরা দিয়েছেন আমরা যে শিক্ষা দান করি তার মূল্যায়ন পাব সেদিন, যেদিন পবিত্র হাতে কোন শিক্ষার্থী আমাদের কবরে মুঠো মাটি দিবে নিজেকে সময় দিতে দিতে এতটা স্বার্থপর হয়েছি যে স্যারকে আর কখনোও মনেও পরেনি। নিজে এখন বেসরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা তাই এসব ভাববার মতো সময় হয়ে উঠে না এমন সত্যটাই আজ বারংবার নিজেকে লজ্জা দিচ্ছে। সময়ের প্রয়োজনে মানুষ স্বার্থপর হয় এটার আমিই এখন উদাহরণ হতে চলেছি।


পড়ন্ত বিকেলে রিকশাযোগে কাঁচাপথ ধরে রওয়ানা দিলাম স্যারের বাড়ির উদ্দেশ্যে চার কিলোমিটারের মতো হবে। গত বছরের নদী স্রোতে বিলীনপ্রায় এলাকা সামনের রাস্তাটাও নদী নিজের মনে করে নিয়ে গেছে। বাড়ির কিছুটা আগেই রিকশা বিদায় দিতে হলো ভাঙ্গনের কবলে পড়া রাস্তার কারণে। ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে এ জায়গাগুলো আকর্ষণীয় হলেও স্থানীয়দের কাছে বিভীষিকা। বাড়ি চিনতে কষ্ট হলো না মোটেই তবে কষ্ট হলো নদীএতো নিকটে চলে এসেছে যে পরবর্তী শিকার স্যারের বাড়িটাই। পরিচ্ছন্ন উঠোন টিনের তিন খানা ঘর। ঘরের চালের টিনের রং দেখেই সংস্কারাভাব স্পষ্টই বোঝা গেলো।


স্যারের ডাকে যখন ঘরে ঢুকলাম নাটকীয়তার শুরু তখন থেকেই শুরু। বিছানার চাঁদরের মলিনতা ঢাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে স্যারের শায়িত শরীর মাথার নিচের বালিশের ছিদ্রপথ দিয়ে তুলোগুলো উকি দিচ্ছে, মাথার দিকটায় মাটিতে রাখা ছাইভর্তি ছোট ভাঙ্গা পাত্রটা বুঝিয়ে দিচ্ছে স্যারের শারীরিক অবস্থা, বিছানার নিচে রাখা পাদুকাদ্বয়ের মধ্যবর্তী ক্ষয় অংশ দিয়ে মাটি তাকিয়ে আছে, পুরাতন পান্ডুলিপিগুলো স্থান পেয়েছে ঘুনে ধরা তিন পাওয়া টেবিলটায় ঘরের পূর্ব দিকের জানালার কপাটের অভাব দূর করছে এক টুকরো কাপড়। লজ্জা কিনে নেওয়ার জন্যই যেন এখানটায় আসা।


অনলাইনে কাজ করে টাকা ইনকাম

সব থেকে বেশি কষ্ট পেলাম স্যারের বিবাহ উপযোগী মেয়ের বস্ত্রদর্শণে। হাত দিয়ে বারংবার চেষ্টা করছে জামার ছিড়ে যাওয়া সামান্য অংশ ঢেকে রাখার। স্ত্রী গত হওয়ার পর থেকেই মেয়েকে নিয়ে এখানে পড়ে আছেন। আধুনিকাদের মতো আগ বাড়িয়ে আদিখ্যেতা দেখানোর মতো মানসিকতা তাদের নেই এটা বেশ বুঝলাম। অল্প সময়ের মাঝেই আমরা আপনের চেয়েও বেশি কোন আত্মীক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারলাম। জীবনের গল্পগুলো শুনলাম জানলাম প্রতিনিয়ত জীবনযুদ্ধের মর্মান্তিক বিবরণ। রাতের খাবার খেয়ে বিদায় নেওয়ার পূর্ব মূহুর্তে আমার হাত জড়িয়ে ধরলো একটা উপকার করবে বেলাশেষের এ আকুতি আমাকে ভাবিয়ে তুললো ক্ষণিকের জন্য। বসলাম স্যারের পাশেই আবার। মেয়েরাও বাবার মনোবাক্য বুঝতে পেরে অন্য ঘরে আশ্রয় খুঁজলো।


করোসিনের স্বল্পতায় ধুকে ধুকে জ্বলে উঠা সলতে টার মতো আমারর মাঝেও আলোআধারীর খেলা চললো।জি স্যার বলুনসাহস দিলাম উপস্থাপনের। আমার অবসর ভাতা'টার ব্যবস্থা করে দিতে পারবে কি বলছেন স্যার চমকে উঠলাম কথাটায়। বলছি। সাড়ে ছয় বছরেও হিসাব রক্ষণ অফিসের হিসাব মিটাতে পারিনি।


কান্নার শব্দ স্পষ্টতর, কণ্ঠের জড়তা প্রকটাকার ধারণ করলো স্যারের। হাতটা আরো চেঁপে আবার বললো-আমি আট-দশ লাখ চাই না উনাদের ভাগ নিয়ে যা বাকি থাকে তাই যেন দেয়। দুই মেয়েকে বিয়ে দিতে হবে অন্য কোথাও বসত গাড়তে হবে এজন্যই এতটুকু দরকার।


সরকারি অনলাইন ইনকাম

করণীয় জ্ঞান আমার লোপ পেয়েছে। কি বলবো তার ভাষা আমার জানা নেই। যে মানুষটা অনেকবার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হয়েছেন শিক্ষার ফেরীওয়ালা হয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছেন সারাটা জীবন প্রধান শিক্ষক হিসেবেই অবসর নিয়েছেনbতাঁরাই যদি এমতাবস্থার শিকার হয় তাহলে অতিসাধারণরা কোথায় কি করবে পারলে দ্রুতই করিও নতুবা আগামী বন্যায় বাবা-মেয়ের ঠাই নদীতেই হবে।


আত্মবিশ্বাসের দীর্ঘ নিঃশ্বাস টুকু দিয়ে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলাম। হাতটায় নির্ভার হওয়ার মন্ত্রের চাঁপ দিয়ে বললাম জি স্যার অবশ্যই পারবো। কিছু সময়ের জন্য হাতটা ছাড়িয়ে নিলেন স্যার বালিশের নিচ থেকে কিছু বাহির করে আমার হাতে গুজে দিলেন। দেখার আগেই আমার হাতটা চেঁপে ধরলেন স্যার বললেন সাইকেল টা বিক্রি করে চব্বিশ শত টাকা সংগ্রহ করেছিলাম এটা তুমি রাখো। অনেক জায়গাতেই টাকা খরচ হবে তোমার।


অনলাইন ইনকাম সাইট

লজ্জায় মাথা তুলতে পারলাম না। বিদায় মূহুর্তেও স্যারের কান্নার মৃদু শব্দ শুনেই বেরুলাম। বাহিরে কিছুটা সময় অপেক্ষা করে টাকাগুলো স্যারের বড় মেয়ের হাতে ফেরত দিয়ে আসলাম। হেটেই রওয়ানা দিয়েছিলাম রিকশা পেয়েও মন সায় দেয় নি বলে। রাতের অন্ধকার কাটানোর জন্য মোবাইলের আলোটুকুরও সাহায্য নিতে মন চাইছিলো না। সামান্য এ পথটুকুর অন্ধকার সহ্য না হলে যুগে যুগে আব্দুস সামাদ স্যাররা অন্ধকার সমাজে টিকে আছে কেমনে।


এভাবেই পথ চলতে চলতে কোন ঝালমুড়ির দোকানে ঝালমুড়ির কাগজের প্যাকটায় চোখ আটকে যাবে আব্দুস সামাদ স্যারের পান্ডুলিপির টুকরো অংশ দেখে। কি বা করার আছে আমার চোখের কোণে সামান্য জলের আশ্রয় দেখে হয়তো ঝালমুড়িওয়ালা বলবেস্যারচোখে তো জল। ঝালটা একটু বেশিই হয়েছে।


এটা সিস্টেম অলিখিত জায়েজ সিস্টেম। যে সিস্টেম বদলানোর ক্ষমতা নেই আব্দুস সামাদ স্যারের ফেরী করে বেড়ানো আদর্শের কারণ এ সিস্টেম এ সি রুমের। এ সিস্টেম বদলানোর জন্য সেমিনারে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে কাজী রোজীর বিদ্রোহবার্তাকে পুঁজি করে বলি