Advertisement

প্রেমিকাকে পাশে বসিয়ে এক সঙ্গে বিয়ে দুই প্রেমিক


বউকে একসঙ্গে বসিয়ে বত খাওয়ানো সব আনুষ্ঠানিকতার জন্য আমাকে বউয়ের কাছে এখনই নিয়ে যাবে ,বউয়ের সাজে কুসুমকে কেমন লাগছে দেখার জন্য মন আনচান করছে, আবার বুকের মধ্যে ধুকপুক ও করছে। হঠাৎ শোরগোল কানে এলো, দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি। সেটা বাড়তে বাড়তে মারামারির পর্যায়ে পৌঁছে গেল। আব্বা এসে আমাকে উঠতে বললেন।এই বাড়ির মেয়েকে পুত্রবধূ রুপে কিছুতেই নিয়ে যাবেন না। বিয়ে হয়েছে তো কি হয়েছে? কাবিনের টাকা সহ  তালাকনামা পাঠিয়ে দেবেন।

আব্বার কথা শুনে আমি যেন পাহাড়ের চূড়া থেকে আছড়ে পড়লাম ।এই মাত্র আমার বিয়ে হয়েছে ,লাল টুকটুকে শাড়িতে আমার বউ  কুসুম ফুলে সাজানো খাটে লম্বা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে এই দৃশ্য কল্পনা করতে করতে কয়েক রাত থেকে ঘুমাতেই পারছি না।কি এক মধুর অস্থিরতা, উৎকণ্ঠা নিয়ে আজকের দিনটির জন্য অপেক্ষা।এক মুহুর্তেই সব কিছু যেন দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো।

আমি কি করবো বুঝতে পারছি না।কি এমন ঘটনা ঘটে গেল!এত আনন্দঘন পরিবেশে হঠাৎ ঘন মেঘে আঁধার হয়ে গেল চারদিক, মাঝে মাঝে সবার হুঙ্কারগুলো বজ্রপাতের মত পড়ছে।একটা বজ্রপাত এসে যেন আমার বুকটাকে ছেদ করে  পুড়িয়ে দিল।কিভাবে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছলাম আল্লাহই জানেন।গ্রামে রটে গেল কাউসারের বিয়ের দিনই বিয়ে ভেঙ্গে গেছে।আম্মা অপেক্ষায় ছিলেন একমাত্র ছেলের বউকে বরণ করতে। সবকিছু শুনে আম্মা খুব গম্ভীর হয়ে গেলেন।তাদের বিয়ের ঘটনার স্মৃতিচারণ করে নিজের ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন।

কি রে মোস্তফা সব কিছু কি ভুইলা গেলি, আমাগোর বিয়ার সময় খাওন নিয়া কি গ্যাঞ্জাম হইছিল  এত বছর আগের ঘটনা আবার নিজের ছেলের বিয়াতে ঘটাইয়া আসছে তোর দুলাভাই। তারা তো সারা জীবনের পেটুক, মাথা মোটা,তুই সাথে ছিলি কি করতে? ছিঃ ছিঃ কি বলবো মানুষ, খাওন নিয়া ঝগড়া কইরা বউ নিয়া আসে নাই।

আব্বা ও কম যান নাচলতে থাকলো তর্ক-বিতর্ক। সাথে আমার বোনেরা,আর যারা আছে সবাই মতামত দিতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল।আম্মা একা একপক্ষ বাকি সবাই আব্বার পক্ষে। আমার আর শোনার ধৈর্য রইলো না। বেরিয়ে গেলাম ঘর থেকে।আকাশে আজ কোন মেঘ নেই তাঁরা জ্বল জ্বল করছে। গতকাল ও এমন পরিবেশে কত  ভাল লাগছিল আজ চোখে এ সব সৌন্দর্য ধরাই পরছে না।

আম্মা বেশ কয়েকটা মেয়ে দেখার পর কুসুমকে পছন্দ করেছেন, আমার ও খুব পছন্দ হয়েছে।ও পছন্দ হওয়ার মতোই,এত সুন্দর করে কথা বলে।ওর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতে শুরু করলে আর রাখতে ইচ্ছে করে না।কি থেকে কি হয়ে গেল। কুসুম কে একটা কল দেই।সে হয়তো ‌ভাবছে, মেরুদন্ডহীন কাপুরুষ, নিজের কোন মতামত নেই, আস্ত ভীতু একটা।  আমার সাথে হয়তো কথাই বলবে না।যাই ভাবুক তবুও কথা তো বলতেই হবে, কেমন যে দমবন্ধ অবস্থা লাগছে।



রিং হচ্ছে, একবার, দুই বার, তিন বার  রিসিভ করলো না। তাহলে কি কুসুম ও আর যোগাযোগ রাখতে চায় না? আকাশ-পাতাল চিন্তা আসছে মনে। পুকুর পাড়ে আমগাছের নিচে বাঁশের তৈরি মাচাটার উপর কতক্ষণ বসে আছি জানিনা । মশাদের গুন- গুনানি চলছে  , মনে হয় উড়িয়ে নিয়ে যাবে, বড়ই গাছে পাখি বসেছে মনে হয়, টুপ টুপ করে বড়ই পরছে পুকুরে। সব বাড়িতেই একে একে আলো নিভে যাচ্ছে, শুধু আমাদের বাড়িটাই আলোতে ঝলমল করছে।  পুকুর পাড়ের চার পাশে নানান রকমের ফলের গাছ। অনেকটা  সময় পরে মোবাইলের রিং হতেই দেখি কুসুমের কল।

রিসিভ করে হ্যালো হ্যালো করে যাচ্ছি, কিন্তু কুসুম বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো।আমিও ভেবে পাচ্ছি না ,কি দিয়ে কথা শুরু করবো। একসময় বললাম করে খাওয়ার কথাই কেন জিজ্ঞেস করলাম না এখনো খাওয়া হয় নাই। তো অনেক রাত এখন ও খাওনাই কাওসারের মনে পরল সে নিজেও খায়নি। আসলে খাওয়ার কথা মনেই আসে নি।  ও বলল আপনারা চলে যাওয়ার পরে  আম্মা অসুস্থ হয়ে পড়েন,ব্লাডপ্রেসার অনেক বেড়ে গেছিস। তাঁকে নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম সবাই । এখন অনেকটা ভাল।আব্বা আর আমাকে আপনাদের ওইখানে পাঠাবেন না।যদি আপনার আব্বা আমার আব্বার কাছে ভুল স্বীকার করেন তাইলেই শুধু পাঠাবেন।

তোমার নিজের মত কি একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কিছু শুনতে পেলাম না।কেটে গেল লাইন।এতটা সময় মোবাইল কানে ধরে রাখা হলো তারপরেও তেমন কিছুই বলা হলো না, নিজের উপরেই নিজের অসম্ভব রাগ হচ্ছিল।এসে পাশে বসলেন। কখন এলেন টের পেলাম না।মামা কি আমার কথা শুনেছেনএকটা হাত আমার কাঁধে রেখে বললেন।

তোর মনের অবস্থা বুঝতে পারতেছি। কি করব বল, দুলাভাইয়ের উপরে তো কথা বলা যায় না।যে চড়া মেজাজ ।এখনো পর্যন্ত রাগ কমে নাই। চিন্তা করিস না সব ঠিক হইয়া যাইবো। খাওয়া-দাওয়া করবি চল্।দুনিয়ার সব কিছু বন্ধ রাখতে পারলেও মানুষ খাওয়া-দাওয়া বন্ধ রাখতে পারেনা।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠলাম এই মুহূর্তে আমাকে রেখে কিছুতেই যাবেন না মামা। বাড়ির ভেতরে এখন থমথমে পরিবেশ। খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ পর্যায়ে । আম্মা এসে আমাকে খাবার এগিয়ে দিয়ে পাশের চেয়ারটায় বসলেন। একটুও ইচ্ছে করছিল না খেতে। আম্মা মনে হয় সেটা বুঝতে পারলেন। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন না করলেও জোর করে খা। পেটে খিধা থাকলে মাথা ঠিকমতো কাজ করবো না। এই সময় মাথা ঠিক রাখন খুবই জরুরি। মুখটা আমার কানের কাছে এনে আস্তে আস্তে আম্মা বললেন উইঠাই তুই ঢাকায় চইলা যাবি।

আমি অবাক হয়ে আম্মার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। বিয়ে উপলক্ষে অফিস থেকে সাত দিনের ছুটি নিয়েছি। গত মাসে দুই রুমের একটা বাসা নিয়ে মোটামুটি গুছিয়েছি।এত দিন মেসেই ছিলাম। অফিস নেই ,এখন আমি ঢাকায় গিয়ে একা একা কি করব?আম্মা যখন বললেন তখন নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে।আমার রুমে ঢুকে দেখি আমার দুই ভাগ্নে ফুলে ফুলে সাজানো খাটে ঘুমিয়ে আছে।আজ আমার বাসর হওয়ার কথা ছিল।এখন আমি ভাগ্নেদের নিয়ে ঘুমাচ্ছি। কি কপাল মোবাইল বের করে দেখি কুসুমের মেসেজ"ঐ সময় খালা আসতেছিল তাই কল কেটে  দিছিলাম। আব্বার কড়া নিষেধ আপনার সাথে যোগাযোগ করতে।

দুই দিন পরে ও ঝামেলা মিটলো না। তৃতীয় পক্ষ ও পারলো না ঝামেলা মেটাতে। দুই পক্ষের কেউ কারো কাছে নত হবে না, সন্তানদের  ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোন মূল্য এখানে নেই।সিদ্ধান্ত হয়ে গেল তালাক হয়ে যাবে।এই দুইদিন দেখা গেল কুসুমের বান্ধবী আইরিন আসছে ঘন ঘন কুসুমদের বাড়িতে। ওদের আর কুসুমদের বাড়ি কাছাকাছি। একসাথে বড় হয়েছে, একসাথে পড়াশুনা করছে। কুসুমের মায়ের মোবাইলে ও কল আসছে প্রতিদিনের চেয়ে বেশি।

কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস ছেড়ে দিবে। নিজের বউকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছি, নিজের মধ্যে একটা অন্যরকম রোমাঞ্চ কাজ করছে। বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে মামাকে অনেক কিছু বলতে চেয়েও কিছুই বলতে পারলাম না।শুধু হাসলাম। কুসুম, আইরিনকে বলল,একদিন সুদে আসলে সব ফিরিয়ে দিব রে। আমারে সব খবরাখবর জানাইস,বলতে বলতে ওর গলা ধরে এলো।বাস ছেড়ে দিল।

শুধু ঐটাই নিতে পারছি।কেউ  যদি সন্দেহ করে,এই জন্য এই হ্যান্ডব্যাগে যা কিছু আটানো গেছে তাই নিতে পারছিতুমি বউ সেজে লম্বা ঘুমটা দিয়া বসে থাকবা।আমি ঘুমটা সরিয়ে তোমাকে দেখবো। এই রকম একটা  কল্পনার দৃশ্য বাস্তবে রূপ দিতে চাই। কুসুম মিষ্টি করে হাসলো।ওর হাসি এত সুন্দর আগে তো খেয়াল করি নি।

 ঢাকা থেকে এসে আধাঘণ্টা আগে নেমেছি এখন আবার কুসুমকে নিয়ে চলে যাচ্ছি ঢাকায়।রাতে একটুও ঘুম হয়নি, উত্তেজনায় কেটেছে । কুসুমের ও হয়তো ঘুম হয়নি। দুজনেরই চোখ ঘুমে ঢুলু- ঢুলু।সব কিছুর পরিকল্পনাকারি আমার আম্মা। আম্মা আমার শাশুড়ি আইরিন আর মামাকে নিয়ে এই অসাধ্য সাধন করলেন আমার আম্মা অসাধারণ একজন।