বাজার করে এসে মায়ের সামনে ব্যাগটা উপুড় করে দিলো শিহাব, মা খুশি হয়ে বড় চিতল মাছটা ধরে বললেন বেশ বড় মাছ এনেছিস তো খোকা। শিহাব বললো মা চিতল মাছের কোপ্তা করো অনেকদিন খাইনি, মা আচ্ছা... বলে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলেন। পরিবারের বড় ছেলে শিহাব মাস্টার্স পাশ করে বাবার শেষ সম্বল ভিটে টুকু বিক্রি করে ঘুষ দিয়ে সরকারী চাকরিটা বাগিয়ে নেয়।
পাশ করে বাবার শেষ সম্বল
অবশ্য ২ বছর ইন্টারভিউ দিতে দিতে ক্লান্ত শিহাবের এছাড়া কোন উপায়ও ছিলো না, সারাজীবন শিক্ষকতা করা বাবার আদর্শ মেনে সততা ও নিষ্ঠার বুলি আওড়ালেও একরকম বাধ্য হয়েই ঘুষ দিয়ে চাকরিটা নেয়, সংসারে আরো দুটি বোন আর ছোট এক ভাই রয়েছে তাদের, একটু সুখের জন্য নিজের মনুষ্যত্ব নীতি সবই বিসর্জন দেয় শিহাব।না না শিহাব ভাই আপনি মোটেই কাজটা ঠিক করেননি আপনি।
আরো ২ লাখ টাকা চাইতেই পারতেন প্রজেক্টটা মোটেই ছোট নয় এই বলে বিরক্তি প্রকাশ করলেন নিয়ামত সাহেব, পদবিতে শিহাব নিয়ামত সাহেবের উপরে হলেও দু'জন ভাইয়ের মতোই শিহাব কিঞ্চিৎ বিরক্তি নিয়ে বললেন নিয়ামত সাহেব প্রজেক্টার জন্য আমাদের যেসব সই ভেরিফিকেশন দরকার সেক্ষেত্রে টাকার কোন প্রশ্নই ওঠেনা তবুও আপনার কথায় আমি ফাইলটা অযথা আটকে ৩ লক্ষ টাকা নিয়েছি আর কত চান আপনি বলেন নিয়ামত সাহেব।
নিয়ামত সাহেব কিছুটা দমে গিয়ে বললেন আমতা আমতা করে বললেন আমিতো এমনি আপনার ভালোর জন্যই বললাম, এবার শিহাব সাহেবের রাগটা যেনো সপ্তমে উঠে গেলো চেচিয়ে বললেন... কোন কূলকিনারা না পেয়ে বাধ্য হয়ে নিজের নীতি আদর্শ বিসর্জন দিয়ে ঘুষ দিয়ে চাকরিটা পেয়েছি অথচ পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজন সবাই ভাবে যোগ্যতার বলে চাকরিটা পেয়েছি, অথচ আমার তো যোগ্যতা ছিলোই শিশু থেকে মাস্টার্স।
পর দিন অযথা অসহায়
অবধি কখনো দ্বিতীয় হইনি তবুও টাকা দিয়ে পদ কিনতে হয়েছে দিনের পর দিন অযথা অসহায় মানুষের ফাইলের পর ফাইল আটকে টাকা নিতে হয়... কেন? এতোবড় পরিবার সামলাতে, তাদের ভোগ বিলাসিতা মেটাতে, গ্রামে থাকতে যারা সাধারণ ডাল ভাতে অভ্যস্ত ছিলো আজ তাদের মাংস ছাড়া পেটে সয় না কেন? কারণ আমি সরকারী চাকরি করি আমি টাকার মেশিন আর এসব অফিসের কুটচাল টাকা আদায় শিখিয়েছেন আপনি।
আমার আর কত ভালো চান আপনি বলুন? একনাগাড়ে কথাগুলো বলে রাগে হাঁপাতে থাকে শিহাব, নিয়ামত কোনমত যেন পালিয়ে বাঁচল। বাড়ি ফিরে শিহাব দেখে তার ছোট দু'বোন বেড়াতে এসেছে দুজনকেই বিয়ে দিয়ে দিয়েছে এবং সুন্দরী হওয়ায় দু বোনেরই বিয়ে হয়েছে বড়লোক ঘরে। রাতে খাবার আইটেমগুলো দেখছিলো শিহাব সকালে আনা চিতল মাছের কোপ্তা, বেগুনভর্তা,গরুর ভূনা,পোলাও,মুরগীর রোস্ট।
প্রভৃতি সবাই খুব মজা করে খাচ্ছিল আর শিহাব খাচ্ছিলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে, মা বললো কিরে খাচ্ছিস না যে? শিহাব বললো এমনি; মা ভাবলো হয়তো ক্ষুধা নেই তিনি আপন মনে খেতে থাকলেন, শিহাব মায়ের দিকে তাকালো মায়ের বয়স হয়েছে। বাবা মারা গেছে আজ পাঁচ বছর হলো, মা নামাজ রোজা করেন যথেষ্ট পর্দায় থাকেন অথচ একবারেও কেন জানতে চাননা তার বড় ছেলে এতো বাজার কিভাবে করে কোত্থেকে।
বেতন পায় তবুও কেন প্রায়
আসে এতো টাকা? মা তো জানেন তার ছেলে সামান্য বেতন পায় তবুও কেন প্রায় প্রায়ই তার হাতে বাজারের লম্বা লিস্টটা ধরিয়ে দেয় তিনি? কেনো উপলব্ধি করেন না এ বয়সে হালাল না হারাম খাচ্ছেন অতচ কি নির্বিকার ভঙ্গিতে খেয়ে চলেছেন খাবারটা সৎ পয়সার নাকি হারামের সেটার কোন ভ্রূক্ষেপ নেই তার।এরপর দু বোনের দিকে তাকালো শিহাব বড়লোক ঘরে বিলাসবহুল জিনিস দিয়ে তাদের বিয়ে দেবার।
সামর্থ ছিলো না তার, কিন্ত মায়ের জোড়াজুড়ি আর বোনদের সুখের কথা ভেবে বাধ্য হয় শিহাব আর সে বোনদের শশুড়বাড়িতে গ্রীস্মের সময়ে টুকরি ভর্তি ফল ফলাদি, রোজায় পুরো পরিবারের জন্য খরচান্ত ইফতারি, প্রত্যক ঈদে দামি দামি পোশাক, কোরবানির গরু ইত্যাদি, শিহাব ভাবে তার বোনেরা কিংবা তাদের শশুর বাড়ির লোকেরা কখনোই এটা বলেনা যে বিয়াইন এতো কিছুর কি দরকার? আর দয়া করে।
পাঠালেও কম পাঠাবেন অনেক তো দিলেন এবার নাহয় থাক, কিংবা তার বোনেরা যেখানে আছে সেখানে তো বিত্তবৈভব কম নয় বোনেরা তো জানে তাদের ভাইয়ের কত ইনকাম অথচ সব সময় তাদের বিলাসবহুল আবদার লেগেই থাকে, এমনকি তাদের বিয়ের সময়ও বিশাল আয়োজনের লিস্ট দেখে শিহাব সোজা মানা করে দিয়েছিলো বোনেরা তো কেঁদে কেটে অস্থির কেনো কারণ আত্নীয় স্বজনের কাছে ছোট হয়ে যাবে।
ছিলো জীবন কৃত্রিমতা
বলে শিহাব অবাক হয়ে ভাবে গ্রামে কত সাধারণ ছিলো জীবন কৃত্রিমতা বর্জিত নিখাদ আনন্দের অনুষ্ঠান দেখেছে সে কই সেখানেতো আনন্দের কোন কমতি ছিলো না তবে কেন এতো বিলাসিতা? নিজেরা বিলাসিতা না করতে পারলে আত্নীয় স্বজনের কি? কই গ্রামে আধপেটা খেয়ে তখন তো কারোও কোন অভিযোগ ছিলো না, তবে এখন কেন এতো নিয়মরক্ষার খেলা?সবার খাওয়া শেষ শিহাব উঠে গিয়ে ছাঁদে এসে একটা সিগারেট ধরালো।
চাকরী জীবনের প্রথমদিকের কথা মনে পড়তে লাগলে তার মাত্র দুটো রঙ্গচটা শার্ট আর ফরমাল প্যান্ট ছিলো তার ভাই বোনেরা মিলে দু'বেলা খেয়েই খুশি থাকতো তখন সে ঘুষও নিতো না, শুরুটা খারাপ হলেও শিহাব যথেষ্ট সৎ থাকার চেষ্টা করেছিলো এর মধ্যে বাবা মারা গেলে সমস্ত দায়িত্ব তার উপর এসে পড়ে আজ অনেক বছর বাদে তার বাড়ি গাড়ি টাকা সবই আছে অথচ সুখ নেই কারণ তার উপার্জন তারই গলার কাঁটা কিন্ত সে তো পরিস্থিতির শিকার।
মা, বোন ভাইদের অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতা মিটাতে মিটাতে কখন যে সে দুর্নীতির মায়াজালে আটকে গেছে সে নিজেও জানে না আচ্ছা মানুষ কি দ্রব্যের এতটাই কাঙ্গাল?ব কাজেই পারদর্শী ছিলাম। মেস লাইফে সব ছেলেরাই কম বেশি শিখে নেয়। যা ভবিষৎে দারুন কাজে দেয়।চাকুরীর ২ বছর পর্যন্ত একাই করেছি সব। অফিস থেকে ফিরেই কফি,রান্না,টুকটাক কত কাজ। ছোট একটা রুম।
ভেবেছিলাম বিয়ের পর
একাই থাকতাম।আজ বিয়ের ৩ বছর ৩ মাস হতে চললো। ভেবেছিলাম বিয়ের পর বউয়ের হাতের রান্না আর গরম গরম কফি খাব। এই বুঝি কষ্টের দিন শেষ হলো। কিন্তু না! বউয়ের শর্ত হলো কফি জন্য তাকে প্রতিদিন ৩০ টাকা এবং রান্না জন্য প্রতিদিন ১০০ টাকা দিতে হবে। উপায় না পেয়ে রাজি হয়ে গেলাম।বিয়ের পরদিন থেকেই এভাবে টাকা দিয়ে নিজের বউয়ের হাতের রান্না খাওয়া লাগে।অফিসে বসে কাজ করছি।
এমন সময় বাসা থেকে ফোন, ছোট ভাইয়ের আক্সিডেন্ট। অবস্থা সংকটময়। বাবা বললেন,আজই অপারেশন করতে হবে আমরা হসপিটালে তাড়াতাড়ি চলে আয় বাবা। আমার একমাত্র আদরের ছোট ভাই,ওর কিছু হয়ে গেল আমরা কেউ বাঁচবোনা। শশব্যস্ত হয়ে হসপিটালে গেলাম। নিথর দেহ নিয়ে পড়ে আছে সে।
ডাক্তার বললেন এখনই অপারেশন করতে হবে নইলে লাইফ রিস্কে পড়ে যাবে। এখনই আপনি ১ লক্ষ টাকা ক্যাশ কাউন্টারে জমা দেন। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। ছোট একটা কোম্পানীর হিসাবরক্ষক আমি। যা আয় করি সবই চলে যায় সংসার খরচে। সেভিংস বলে কিছুই নেই। কলিগ বন্ধু বান্ধ