Advertisement

ছাব্বিশ বছরের মৃত্যু পথযাত্রী এক তরুণের হার্ট


কিছুদিন আগে নেহাল সাহেবের হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট হয়। ছাব্বিশ বছরের মৃত্যু পথযাত্রী এক তরুণের হার্ট বসানো হয়। আল্লাহর রহমতে মৃত্যুর মুখ থেকে ওনাকে ফিরিয়ে আনেন ডাক্তাররা। এরপর থেকেই ওনার সাথে ঘটছে যত রকমের অদ্ভুত ঘটনা। সুন্দরী রমণীদের দেখলেই চল্লিশ বছর বয়সী নেহাল সাহেবের হার্ট ধুকপুক করতে শুরু করে। তাদের থেকে দৃষ্টি সরাতে ইচ্ছে করে না।উনি বিষয়টা খেয়াল না করলেও ওনার স্ত্রী নিসা বুঝতে পারলো।

মেয়ে কেমন পড়ছে জিজ্ঞেস করেন

ঘর থেকে ব্যাপারটা শুরু হলো। ওনার ক্লাস থ্রি পড়ুয়া মেয়েকে যে শিক্ষিকা পড়াতে আসে তার দিকে ওনার নজর যায়। পড়ানোর সময় হুটহাট রুমে ঢুকে যান। মেয়ে কেমন পড়ছে জিজ্ঞেস করেন। স্ত্রীকে চা-নাস্তা দিতে বলেন। মেয়ের শিক্ষিকার প্রতি হঠাৎ এত কেয়ারিং হওয়াটা নিসার দৃষ্টি এড়ালো না। তবে যেহেতু খারাপ কোনো প্রমাণ পায়নি তাই স্বামীকে এ বিষয়ে কিছু বললো না।কিছুদিন পর মেয়েকে নিয়ে নিসা ডাক্তারের চেম্বারে গেল। স্বামীকে বলা হয়নি কথাটা।

 মেয়েটা কিছুদিন ধরেই পেটে ব্যথা করে বলছে। ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে যখন বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো তখন দেখলো অফিসের পিএস মেয়েটাকে সাথে নিয়ে নেহাল সাহেব নিজেই ড্রাইভ করে যাচ্ছেন। ড্রাইভার থাকা সত্বেও কেন নিজে ড্রাইভ করছেন আর ড্রাইভার কেন ওই মুহুর্তে সাথে নেই তা নিয়ে মনে সন্দেহ দানা বাঁধলো। ওদের দু'জনের মুখের ভঙ্গিমা সন্দেহ অনেকটা গাঢ় করে দিলো। সিএনজি ড্রাইভারকে নিসা সামনের গাড়ির পিছে যেতে বললো। 

গাড়ি গিয়ে থামলো একটা আবাসিক হোটেলের সামনে। গাড়ি থেকে নেমে পিএসকে পেছন থেকে কাঁধ জড়িয়ে ধরা নেহাল সাহেবকে দেখে নিসা বুঝে গেল এরপর কি হতে চলেছে। মেয়েকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসলো।বাসায় এসে অনেক কান্নাকাটি করলেও নেহাল সাহেবকে সেটা বুঝতে দিলো না নিসা। রাতে তিনি বাসায় আসলে স্বাভাবিকভাবেই তাকে প্রশ্ন করলো,আজকের দিনটা কেমন গেল? আর বলো না। অফিসে এত কাজের চাপ। একা সামলাতে কষ্ট হয়েছে।কেন।

বাঁশের কাঁচা কঞ্চি এনে নেহাল 

 তোমার পিএস আছে তো। তাকে কিছু দায়িত্ব দাও।ওহ্ শিমু? আজ ও আসেই নি। ওর না-কি শরীর খারাপ লাগছিল।এমন তরতাজা মিথ্যা শুনে নিসার ইচ্ছে করছে বাঁশের কাঁচা কঞ্চি এনে নেহাল সাহেবের পশ্চাৎদেশে বেদম পেটাতে, যাতে করে কাউকে দেখাতে না পারে। তবুও চুপ রইলো। এরপর ওর ভার্সিটির এক বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টা শেয়ার করলো।তুই কি এ ব্যাপারে কিছু করতে পারবি?কি করতে বলছিস?আমার প্রমাণ চাই। প্রমাণ ছাড়া আমি ওনাকে কিছু বলতে পারবো নাবেশ তো! 

যে হোটেলে গিয়েছে সেখানের সিসিটিভি ফুটেজ আনলেই প্রমাণ পাওয়া যাবে। তোর কি মনে হয়? তুই গিয়ে ফুটেজ বা অন্য ইনফরমেশন চাইবি আর ওরা দিয়ে দিবে?  সোজা কথায় না দিলে পুলিশের সাহায্য নেবো।পুলিশের সাহায্যই যদি নেব তাহলে আমি নিজেই নিতে পারি। তোকে বলছি কেন?তুই আসলে কি চাইছিস?আমি চাইছি ঘরের কথা বাইরের মানুষকে না জানিয়ে সমস্যা সমাধান করতে।তো এখন কি করবি?তুই ওনাকে কিছুদিন ফলো করবি। প্রমাণ জোগাড় করবি।দেখ বোন, আমার অনেক কাজ আছে। আমি এসব পারবো না। 

তবে তুই বললে একজনকে দিয়ে কাজটা করাতে পারি।যেভাবেই পারিস প্রমাণ জোগাড় কর।এরপর বেরিয়ে আসলো চমকপ্রদ তথ্য। নেহাল সাহেবের পিছু নিয়ে ওনার অফিসের সেক্রেটারি ছাড়াও আরো দু'টো মেয়ের সাথে ওনার অবৈধ সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া গেল। সব শুনে আর বিভিন্ন জায়গায় ওদের ঘোরাফেরার ছবি দেখে নিসা যেন আকাশ থেকে পড়লো। একজন মধ্যবয়স্ক মানুষ যার একটা মেয়েসহ স্ত্রী আছে তিনি কিভাবে এসব করতে পারেন।

এবারও আগের মতোই জঘন্য 

এবার নিসা ওর বন্ধুকে বলে নেহাল সাহেবের ফেসবুক আইডি হ্যাক করালো। এবারও আগের মতোই জঘন্য সারপ্রাইজ পেল সে। বিভিন্ন মেয়েদের সাথে ওনার মেসেজে নিয়মিত কথা হয়। শুধু কথাই না, কারো কারো সাথে অশ্লীল মেসেজও আদান প্রদান হয়।এবার আর নিসা চুপ করে থাকতে পারলো না। নেহাল সাহেবের সাথে এসব নিয়ে কথা বলা দরকার। এর একটা সমাধান তো করতেই হবে।কি শুরু করেছো তুমি এসব?তুমি আমার পেছনে ডিটেকটিভ পাঠাও? আমার ফেসবুক আইডি হ্যাক  করো? 

তোমার সাহস হয় কিভাবে এসব করার? যেভাবে তোমার সাহস হয় বউ বাচ্চা রেখে অন্য মেয়েদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক করার, ঠিক সেভাবে।আসলে হয়েছে কি.... বিষয়টা আমি তোমার সাথে শেয়ার করতেই চাচ্ছিলাম। কিন্তু আমি জানতাম তুমি আমাকে বিশ্বাস করবে না।মানে? কি বিষয়? হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট এর পর থেকে আমি যে মেয়েকেই দেখি তাকেই ভালো লাগে, কথা বলতে ইচ্ছে হয়। এমন ইচ্ছে কেন হবে হঠাৎ করে? আমার কি মনে হয় জানো? যার হার্ট বসানো হয়েছে তার ভেতর এসব সমস্যা ছিল। 

যার কারণে আমারও এমন হচ্ছে। আমি কি করবো বলো! আমি তো ইচ্ছে করে এসব করছি না।বড়োই চিন্তার বিষয়!সেদিনের মতো নেহাল সাহেব রক্ষা পেলেন। নিসা শাশুড়িকে ফোন করে সব বললো। তিনি নেহাল সাহেবকে বোঝালেন কিন্তু তাতে লাভ হলো না। তিনি আগের মতোই মেয়েদের সাথে ঘোরাফেরা করছেন, কথা বলছেন। নিসা ভাবতে লাগলো কি করা যায়। স্বামীকে যে অসুখ ধরেছে তার একটা সমাধান তো করতেই হবে। চিন্তাভাবনা করে সমাধান পেয়েও গেল।

সকালে নেহাল সাহেবের ঘুম

 স্বামীর অসুখ সারানোর সব ব্যবস্থা করলো। বেশ কিছুদিন পর সকালে নেহাল সাহেবের ঘুম ভাঙলো দেরি করে। বিছানা ছেড়ে উঠতে যাবেন তখন তিনি নিজেকে দেখে অবাক হলেন। চার হাত-পা চারদিকে বেডের চার পায়ার সাথে বাঁধা অবস্থায় শুয়ে আছেন তিনি। নড়ার উপায় নেই। এসব দেখে মাথায় রক্ত চড়ার মতো অবস্থা। চিৎকার করে বউকে ডাকতে লাগলো।নিশির আম্মু, কোথায় তুমি? জলদি এদিকে এসো"। নিসা দৌড়ে রান্নাঘর থেকে আসলো।চেঁচাচ্ছি কেন? দেখতে পাচ্ছো না? আমাকে দেখে তোমার চুপচাপ থাকবো বলে মনে হচ্ছে? এসব কেমন দুষ্টুমি? ডাকো তোমার মেয়েকে।

 আজ ওর একদিন কি আমার একদিন! তার আগে আমার বাঁধন খোলো তুমি।আরে আরে, অস্থির হচ্ছো কেন! এসব আমার মেয়ে করেনি, আমি করেছি।তুমি করেছো মানে? ইয়ার্কি হচ্ছে? মাঝে মাঝে একটু ইয়ার্কি করতে হয়। নাহলে কি সংসার জমে বলো!মিনিটখানেক পর হাতে বটি নিয়ে রুমে ঢুকলো নিসা। সাথে বাঁশের একটা ছোটো সাইজের কঞ্চি। কঞ্চিটা দেখে মনে হচ্ছে এক-দুদিন আগে কেটে আনা হয়েছে। সবুজ তাজা কঞ্চিটা শুকাতে শুরু করেছে। কঞ্চির গিঁটগুলো দা দিয়ে চেছে মসৃণ করা হয়েছে। 

দেখতে যতটা সুন্দর মনে হচ্ছে এর একশন ততটাই গভীর।এক হাতে কঞ্চি আরেক হাতে বটি নিয়ে নেহাল সাহেবের পাশে গিয়ে বসলো।এ-এসব কি? এগুলো এনেছো কেন তুমি?তোমার অসুখ সারানোর জন্য।মানে কি? কি অসুখ?ওই যে, মেয়ে দেখলেই তোমার ধুকপুকানি শুরু হয়। সেই অসুখ।এসব কি বলছো? তুমি জানো এতে আমার দোষ নেই। যে ছেলেটার হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়েছে এটা তার দোষ।

তাহলে আজ আবার এসব

সেদিন তো তোমাকে আমি বুঝিয়ে দিলাম। তুমিও সব বুঝেছিলে। তাহলে আজ আবার এসব কেন?সেই ছেলেটার হার্ট হলেও এখন তো সেটা তোমার তাই না। আর তুমি আমার হাজব্যান্ড। তাহলে তোমার অসুখ সারানোর দায়িত্বটাও আমার। তো বলো, কোথা থেকে শুরু করবো? তোমার কোন অঙ্গটা আগে কাটবো?কি-কি বলছো তুমি? নিজের স্বামীর সাথে কেউ এমন ব্যবহার করে।

এবার নিসা কঞ্চি দিয়ে নেহাল সাহেবকে বেদম পেটাতে লাগলো। কোথায় লাগছে সেটা দেখার দরকার নেই। সহজ বাংলায় উরাধুরা পেটাচ্ছে। নেহাল সাহেব চিৎকার করে মেয়েকে ডাকছেন সাহায্যের জন্য। কিন্তু মেয়েকে নিসা পাশের বাসায় রেখে এসেছে ওদের বাচ্চার সাথে খেলার জন্য। কাজের মহিলাকেও আজ ছুটি দিয়েছে। বাসায় এখন ওরা দু'জন। তুই ভেবেছিস কি? মেয়েদের সাথে এসব নষ্টামি করবি, আমার সাথে ভন্ডামি করবি, উল্টাপাল্টা বুঝাবি আর আমি সেটা বুঝে যাব? হার্টের দোষ তাইনা।


তোর ফেসবুকে মেয়েদের সাথে মেসেজ তোর সার্জারির অনেক আগে থেকেই চলছে। তোর পিএসও তার আগে থেকেই অফিসে আছে। আর তুই সার্জারির দোষ দিচ্ছিস? ভন্ডামির জায়গা পাস না? হার্টের দোষ? ওই ছেলেটার দোষ? আর তুই সাধু?এসব বলছে আর স্বামীকে পেটাচ্ছে নিসা। ও জানে সামাজিক বা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটা খুবই জঘন্য কাজ, হয়তোবা ক্ষমার অযোগ্য। কিন্তু সংসার আর সম্মান বাঁচাতে আর কোনো রাস্তা পায়নি। স্বামীকে বুঝিয়েও লাভ হয়নি। আর যাদের একবার বাইরে মন চলে যায় তাদের ফেরানো কঠিন হয়ে পড়ে।

ঘরে এসব নিয়ে অশান্তি

একবারও তোমার মেয়েটার কথা ভাবলে না? ঘরে এসব নিয়ে অশান্তি হলে ওর উপর তার কেমন প্রভাব পড়বে? ও কি শিখবে? আর এসব যদি ও জানতে পারে ওর বাবাকে চরিত্রহীন হিসেবে চিনবে। কিসে কম আমার? ওই মেয়েগুলোর চেয়ে আমি কি কুৎসিত? আমি অশিক্ষিতা? আনস্মার্ট? কেন তোমার একজন বউ দিয়ে মন ভরে না?ছেড়ে দাও বউ। ভুল করে ফেলেছি আমি। মাফ করে দাও।মাফ তো তোমাকে আমি করবোই। 

তার আগে শুনে নাও। কাল রাতে তোমাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়েছিলাম। যখন ঘুমে ঢুলুঢুলু করছিলে তখন দলিলে তোমার সিগনেচার নিয়ে বাড়িটা আমার নামে করে নিয়েছি। তুমি এ পর্যন্ত যা যা করেছো সব প্রমাণ আমার কাছে আছে। আবার কখনো এসব দেখলে ডিভোর্স তো দেবোই, সাথে নারী নির্যাতন মামলাও করবো। এসব কি বলছো? আমাকে তুমি ডিভোর্স দেবে? তোমার এসব দেখলে কোন মহিলা তোমার সাথে থাকতে চাইবে শুনি? তোমার টাকা দেখে? আর তোমার কি মনে হয় ডিভোর্স দিলে আমার মেয়েকে তোমার কাছে থাকতে দিব।

কখনোই না। ওর সুরক্ষার জন্যই বাড়িটা আমার নামে করে নিলাম।ভালো করেছো বউ, খুব ভালো করেছো। এখন আমাকে খুলে দাও। জ্বলে গেল ও মা গো....আর যদি কখনো এসব দেখেছি তোমার পরিণতি কি হবে তুমি কল্পনাও করতে পারবে না। কথাটা মনে রেখো।এরপর নেহাল সাহেবকে আর কখনো অপ্রয়োজনে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখা যায়নি।