Advertisement

দেখে ঢুকে পড়েছিলাম সাহস করে



জাহাংগীরনগরের একটি মেয়ে আমাকে বলেছিল, চেহারা এমন কাকলাস মার্কা কেন তোমার? গাঁজা খাও নাকি? মৃদু হেসে উত্তর দিয়েছিলাম, উহুঁ, গাঁজা নয় নারী খাই! লজ্জায় গাল আর কান লাল হয়ে উঠতে দেখলাম। একটু সময় নিয়ে বলল, ছেলেগুলা সব বদের হাড্ডি। কথায় না পারলেই অশ্লীলতার আশ্রয় নেয়। বললাম, চলো দাবা খেলি। দেখি কে কেমন পারে? মেয়ে বলল, আমি তোমাকে বলে কয়ে হারাব।

 গিয়ে খেলার আয়োজন দেখে


 কথা হচ্ছিল টিএসসির গেমস রুমে। ঘুরতে গিয়ে খেলার আয়োজন দেখে ঢুকে পড়েছিলাম সাহস করে। ওপেনিং গেমের অংশ পার হবার পরই বুঝলাম এ ঝানু খেলোয়াড়, মিডল গেমেই হেরে যাব। ইন্ড গেমে যাবার যোগ্যতাও আমার নাই। অগত্যা বলে বসলাম, এই গেমে যদি তুমি হার, আমি নিশ্চিত, আগামী এক সপ্তাহ ভাত খাবে না। এমনকি আত্মহত্যাও করে বসতে পার।

 তারচেয়ে বরং আমার হেরে যাওয়াই মঙ্গল! মেয়ে মুখ বাঁকিয়ে বলল, ধ্যাত! আগে হারাও না দেখি কেমন পার! বললাম, ওপেনিং দেখে কি মনে হচ্ছে খেলা পারি না? কিছুটা বিভ্রান্ত কিছুটা টেনে উচ্চারণ করল, হুম পার কিছুটা বুঝা যাচ্ছে। বাট আমার সাথে পারবে না।হাত দিয়ে গুটিগুলো আউলিয়ে বললাম, হ্যাঁ ঠিক বলেছ তোমার সাথে পারব না। তুমিই জিতলে। আমি হার মেনে নিলাম।

 ‘তুমি আসলেই একটা বদের ডিব্বা!’ মেয়েটির কণ্ঠে উষ্মা ঝরল। বুঝলাম এই মেয়ে জীবনে একটা গালিই শিখেছে- বদ। বললাম, বদ ছাড়া আর কোন কোন শব্দ দিয়ে তুমি রাগ প্রকাশ কর? মেয়ে এবার লাজুক হেসে বলল, কি ভাব তুমি? আমি গালি পারি না? অনেক অনেক গালি পারি। বললাম, বেশ তাহলে চল ওই উন্মুক্ত মঞ্চে। এই দুপুরে ওখানে কোন লোক নেই।

দরজার কাছে গিয়ে ফিরে


 শুনব তোমার গালিবিতান। বলেই উঠে দাঁড়ালাম। দরজার কাছে গিয়ে ফিরে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা এখনো ওখানে বসে আছে। বললাম, কই ওঠো! অনিচ্ছার দড়ি টানতে টানতে উঠে দাঁড়ালো মেয়েটা।তখন দুপুর দুইটা। খাওয়া হয়নি এখনো। জিজ্ঞেস করলাম, খেয়েছ দুপুরে? আবারো বিভ্রান্ত হাসি দিয়ে বলল,না খাইনি। আজ আমার উপবাস চলছে।তুমি কি হিন্দু? নাহ! হিন্দু হতে যাব কেন?বা রে! মানুষ হিন্দু হতে পারে না?পারে ।

 কিন্তু আমি হিন্দু না। তাহলে উপবাস করছ কেন? ওটা তো হিন্দুরা করে।আমিও করি। মাঝে মাঝে মন খারাপ থাকলে উপবাস করি।রোজাই তো রাখতে পাররোজা রাখলে তো সওয়াব হয়। তাতে লাভ আছে। কিন্তু উপবাসে সওয়াব নাই। আছে নিজেকে কষ্ট দেয়া তুমি কি দুঃখবিলাসী? কিছুটা। তাহলে দুপুরে খাবে না কিছু? নাহ খাব না। ঠিক আছে আমিও খাব না।

 তুমি খাবে না কেন?ধরে নাও তোমার মন খারাপ বলে আমারও মন খারাপ!আমরা দুপুর রোদে উন্মুক্ত মঞ্চের সিঁড়িতে বসে প্রথমে কিছুক্ষণ রোদ আর বাতাস খেলাম। তারপর বললাম, এবার উজাড় কর তোমার গালির ভাণ্ডার! মেয়েটা চুপ হয়ে বসে আছে। জিজ্ঞেস করল, তুমি কোন ইয়ারে পড়? বললাম, কেন? প্রেম নিবেদন করবে নাকি! ডান হাত দিয়ে কাঁধের উপর মৃদু একটা চড় দিয়ে বলল, খামখেয়ালি রাখ তো!

 এসব পরিচয় স্টাটাসের


 কোন সাবজেক্টে কোন ইয়ারে পড় বল! বললাম, সম্পর্ককে কেন এসব পরিচয় আর স্টাটাসের শৃংখলে বাঁধতে চাও শুনি?আমার মন খারাপ কেন শুনবে? মেয়েটার প্রশ্নে আগ্রহী হয়ে উঠলাম। বললাম, শুনব। বলল, ছ্যাকা খেয়েছি। কত তম ছ্যাকা জান? প্রশ্ন বোধক দৃষ্টি নিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। বলল, ষষ্ঠ ছ্যাকা। তখনি বেশ নাটকীয় ভঙ্গীতে উঠে দাঁড়িয়ে কুর্নিশ করে বললাম, প্রণতি গ্রহণ করুন হে ছ্যাকাশ্বরী! মেয়েটা খিলখিল করে হেসে উঠল।

 তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বুকের উপর দুম দুম করে দুই হাতে গোটা আস্টেক কিল বসিয়ে দিয়ে বলল, তুমি আসলেই খুব মজার! প্রশংসাটা লুফে নিয়ে বললাম, অথচ দেখ এই মজার মানুষটাকেই আর তুমি গ্রহণ করতে পারবে না যখন জানবে সে একজন রিক্সাচালক!চোখ দুটো বড় বড় করে জিজ্ঞেস করল, সত্যিই তুমি রিক্সা চালাও? মেয়েদের নিয়ে এই এক বিপদ!

 কখন যে কি বিশ্বাস করে আর কখন যে কি অবিশ্বাস করে তা আগে থেকে বোঝা মুশকিল!কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর নিজ থেকেই বলল, যাহ তুমি রিক্সাচালক হবে কেন? বললাম, মানুষ আসলে কার সাথে বন্ধুত্ব করে? পরিচয় বা স্টাটাসের সাথে নাকি মৌলিক মানুষটির সাথে? মেয়েটি উত্তর দিল, আমার প্রতিটি রিলেশন ভেঙ্গেছে আমি ওদের চেয়ে ভাল স্টুডেন্ট বলে। এখন তুমিই বল, মানুষ আসলে কার সাথে রিলেশন করে?মেয়েটাকে ভাল লেগে গেছে।

বললাম, একটা অনুরোধ 


 উল্টাপাল্টা বলে এই মেয়ের সাথে সম্পর্কের এখানেই ইতি টানতে ইচ্ছে করল না। বললাম, একটা অনুরোধ রাখবে? মেয়েটা বলল, কি? বললাম, রাখবে কিনা বল! বলল, রাখার মত হলে রাখব। নাহ এভাবে বললে তো অনুরোধ করব না। তুমি শর্তহীন ভাবে বল যে, রাখব। তাহলে বলব। কিছুক্ষণ ভেবে বলল, কিস করতে চাও? বললাম, অত ফাস্ট না আমি।

আবার কিছুক্ষণ ভাবল, আমাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে চাও? বললাম, তুমি এত কমপ্লিকেটেড কেন? সোজা বাংলায় বল যে, রাখব। তখন ফিক করে হেসে বলল, আচ্ছা বল রাখব। বললাম, চলো দুজনে মিলে দুপুরের খাবারটা খেয়ে নিই। মেয়েটা উদাস চোখে তাকিয়ে বলল, তোমার চাওয়া এত কম কেন? বেশ ডিপ্লোম্যাটিক ভংগীতে উত্তর দিলাম, নিজের চাওয়া নয় অপরের চাওয়ার গুরুত্বই আমার কাছে।


বেশি!সেদিন পুরোটা বিকেল ওর সাথে কাটালাম। ফোর্থ ইয়ারে পড়ে। বাংলায়। নাম সুক্তি। নিজের পরিচয় দিলাম, ইন্টারের পর ড্রপ আউট হওয়া ছেলে। কাপড়ের ব্যবসা আছে ছোট। গুলিস্তানে। জিজ্ঞেস করেছিল, হকার? বললাম, হকারের মতই। তবে দোকান আছে একটা। মার্কেটের ভেতরে। দোকানের কার্ড চাইল।কিছুদিন আগে গেঞ্জি কিনেছিলাম যে দোকান থেকে সে কার্ডটা বের করে দিলাম।

তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে


 কার্ডের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না তো? বললাম, রাতের বেলা তোমার হলে আমাকে রাখতে পারবে নাকি? ছেড়ে তো আমাকে যেতেই হবে! এবার রেগে গেল সুক্তি- সিরিয়াস সময়েও মজা করো না তো! বললাম, সিরিয়াস সময়ে মজা করলে চাপমুক্তি ঘটে। তাই মজাটা তখনই বেশি করতে হয়। ও বলল, চুপ কর তো! আমার কথার উত্তর দাও। বললাম, ভাল ছাত্রী তুমি। ক্লাসে ফার্স্ট।

 সাময়িক মনকষ্টে আছ। আমার মত মজার একটা ছেলেকে পেয়ে ভাল লাগছে হয়ত। কিন্ত কিছুদিন পর মনে হতে পারে, এই ছেলে তোমার স্টাটাসের সাথে যায় না। তখন আরো বেশি কষ্ট পাবে। সুতরাং এখন ভাল লাগছে ভাল লাগতে দাও। কোন ধরনের প্রমিজ দেয়া নেয়া থেকে বিরত থাক। এখান থেকে বেরুনোর পর, ভাল একটা জব নেয়ার পরও যদি মনে হয় এই ছেলেটাকেই আমার চাই তখন না হয় এসব প্রমিজের দিকে এগুব আমরা!সন্ধ্যা হয়ে গেছে।

 চারদিকে শুনশান নিরবতা। কপোত কপোতিরা আশপাশের বাতাস উষ্ণ করে তুলেছে। ও বলল, একটা কিস করবে! যার সাথেই রিলেশন করেছি, প্রথম সুযোগেই কিস করেছে। শরীর হাতিয়েছে। শারিরীক রিলেশনও করেছি। কিন্তু তার কোনটাই আমার ইচ্ছায় ছিল না সবই ওদের ইচ্ছায়। কিন্তু যখনই অন্য কাউকে পেয়েছে, সরে গেছে। অজুহাত দেখিয়েছে, আমি ভাল ছাত্রী। ওদের পাত্তা দিব না।