Advertisement

যখন আমার বয়সে ২১ বছর তখনই বুঝতে পারলাম জীবন কাকে বলে বাস্তবতা কতটা কঠিন


যখন সবে বুঝতে শিখেছি তখনই দেখতাম প্রায় প্রতি ৬-৭ মাস পর পর আমাদের বাড়িতে নতুন কাজের মেয়ে রাখা হতো। আগের মেয়েগুলো যে কোথায় যেত তা আমার বোধগম্য হয়নি দীর্ঘদিন। কিন্তু একটা রাত আমার কাছে সব কিছু পরিস্কার করে দেয়। এক রক্তাক্ত হিংস্র জগতের সঙ্গে পরিচয় ঘটে আমার।

একরাতে মেয়েলি একটা চিৎকারের শব্দে আমার ঘুম ভেঙে গেল। ফ্যান এবং ডিমলাইট বন্ধ দেখে বুঝলাম বিদ্যুৎ নেই। অন্ধকার হাতড়ে নীচে নেমে দরজার কাছে গেলাম। দরজাটা বাইরে থেকে আটকানো। কাজের মেয়েটা আমার সঙ্গে এক ঘরে মেঝেতে ঘুমায়। অন্ধকারে বোঝা যাচ্ছে না সে ঘরে আছে কিনা। 

শুধু আবিরই যেন দেখেও দেখলনা। অথচ সাদা রঙ্গে ও আমাকে খুব পছন্দ করত। ও আমাকে প্রথম যেদিন দেখেছিল সেদিন নাকি আমি সাদা পোশাকে ছিলাম। কি জানি বাপু আমার অতো কথা মনে নাই। আবার মনে না করলেও মাঝে মাঝেই অনেক কথা আপনাই মনে হয়।

আট বছরের সম্পর্ক আমাদের তারপর বিয়ে। অনেক কষ্টে অনেক ঝড় ঝাপটা পার করার পর দশ বছর আগে ঠিক এইদিনে আমাদের বিয়ে হয়। ভালবাসার মানুষকে নিজের করে পাওয়া নাকি সবার ভাগ্যে হয়না কিন্তু আমার হল,আমাদের হল। সেই সাথে শুরু হল আমাদের নতুন জীবন, আমি যেন আবীরকে নতুন করে পেলাম।

শরীরটা কেমন কেঁপে উঠল। বাবা আর মায়ের মৃদু কথা বলার শব্দ ভেসে আসছে দূর থেকে। যেন তারা কিছু একটা কথা নিয়ে হাসি-তামাশা করছে। সাথে সাথে মেয়েলি একটা কণ্ঠের গোঙানিও কানে এলো আমার। যেন প্রচণ্ড কষ্ট নিয়ে শব্দটা বের হয়ে আসছে তার গলা দিয়ে। আমি জোরে দরজা ধাক্কাতে লাগলাম। 

বাবা আর মায়ের কণ্ঠ মিলিয়ে গেল সাথে সাথেই। তাদের পায়ের আওয়াজ পেলাম, ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে এদিকে। দরজার সামনে এসেই আবার দুজনে ফিসফিস করতে লাগলো। তর্ক করছে কিছু একটা নিয়ে। বুঝতে পারলাম মা আপত্তি করছে দরজা খুলতে আর বলছে, ওর বয়স এখনো হয়নি এসব দেখার। বাবা বলছেন, এখন থেকেই এসব দেখে মানিয়ে নেয়া উচিত। না হলে বড় হয়ে আপত্তি করবে। 

বেশ কিছুক্ষণ তর্ক-বিতর্ক করার পর দরজাটা খোলার শব্দ পেলাম। ভয়ে ভয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম আমি। পুরো ঘর মোমের কম্পিত আলোতে ভরে আছে। মেঝের জায়গায় জায়গায় মোম জ্বালিয়ে রাখা এক বিশেষ নকশায়। আমি অবাক হয়ে বাবা আর মার মুখের দিকে তাকালাম। বাবা উল্টো দিকের ঘরের ভেতর চলে গেলেন কোনো কথা না বলেই। 

বাবা কখনই আমার সাথে তেমন একটা কথা বলতেন না। ওই ঘরটাও মোমবাতির আলোয় ভরে আছে। মা আমার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে বাবার পিছু নিলেন। আমি কয়েক মুহূর্ত স্তব্ধভাবে দাঁড়িয়ে থেকে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম ঘরটার দিকে। ঘরে ঢুকেই আমি একটা প্রচণ্ড মানসিক ধাক্কা খেলাম। এই প্রথম খেয়াল করলাম বাবা আর মায়ের হাতে, কাপড়ে আর মুখে রক্ত লেগে রয়েছে। 

সত্যিই নতুন করে যেন পেলাম বছর ঘুরতে না ঘুরতেই নতুন এক আবিরের সাথে যেন আমার পরিচয় ঘটতে থাকল এত খুঁত খঁতে স্বভাবের, রগচটা, জেদী আবিরকে আমি যেন আগে কখনো কোথাও দেখিনি।

কোন কিছু করেই যেন ওর মন পেতামনা সব সময় আমার প্রতি মুগ্ধ হয়ে থাকা মানুষটার যেন আমার দোষ ছাড়া কিছুই চোখে পড়তনা। আমার চোখ ঝলসানো রঙ্গিন স্বপ্নেরা যেন ফিকে হতে লাগল।

সপ্তাহে সপ্তাহে ঝগড়া আর মাসে একবার কথা বন্ধ করে থাকা আমি বুঝতে পারছিলাম স্বামীরা প্রেমিকদের মত ভালবাসার মানুষের কষ্ট অনুভব করতে পারেলেও স্ত্রীর রাগ, মান অভিমান যেন নিতান্তই তুচ্ছ,আর ভালবাসাটা তখন ন্যাকামী।

মেঝেতে চিৎ হয়ে পড়ে আছে আমাদের বাড়ির কাজের মেয়েটা। সে যে বেঁচে নেই এটা তার গলার নিচ থেকে তৈরি হওয়া রক্তের স্রোতই সাক্ষী দিচ্ছে। মেঝের অর্ধেকের বেশি ভিজে আছে তার রক্তে । মেয়েটা চোখ দুটো বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আতঙ্কে হা হয়ে আছে মুখটা। লাশ! আতঙ্কে পুরো শরীর কাঁপতে লাগলো আমার।

আমি মা আর বাবার দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকালাম। বাবা আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে প্রায় টেনে নিয়ে ফেলে দিল মেয়েটার শরীরের উপর। গলা ফেটে বেরিয়ে আসা চিৎকারটা নিজের শরীর আর মনের সমস্ত শক্তি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করলাম। বাবা ক্রুদ্ধ কণ্ঠে বললেন, 'মুখটা ওর গলার কাছে নাও খোকা, চেখে দেখ ওর রক্ত কেমন লাগে।

আমি করুণ মুখে মায়ের দিকে তাকালাম। মায়ের চোখ দুটো কিছু একটার লোভে জ্বলজ্বল করছে। আমার দিকে তার খেয়াল নেই। বাবা আমার মাথা চেপে ধরলেন মেয়েটার গলার কাছে। আমি ছটফট করতে লাগলাম। কিন্তু এরমধ্যে আমার মুখে ঢুকে গেছে সামান্য রক্ত। পেট গুলিয়ে বমি চলে এলো মুখে।

বড় ছেলে আয়াশের বন্ধুর জন্মদিনে আবির যখন ব্যস্ততার কারনে যেতে পারবেনা বলায় আমিই অফিস শেষে ছেলেকে নিয়ে গেলাম সেদিন আবির অফিস শেষে বাড়িতে ফিরে প্রায় বিশ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিল চাবি না নিয়ে যাবার কারনে। 

সেদিন বাকবিতন্ডতার এক পর্যায়ে খুব অভিমান করে যখন বাবার বাড়িতে চলে গেলাম সেদিন বুঝলাম আমি আরো বড় ভুল করেছি। সুযোগ পেয়ে মা,বাবা,বড় ভাই কথা শোনাতে কেউ ছাড় দিলনা হাজার হলেও আমার পছন্দের বিয়ে। ফিরে এসেছিলাম আমার ভুলের মাশুল দিতে নাকি ভালবাসার টানে সে কথা আজো জানিনা।

ধাক্কা দিয়ে এবার আমাকে ঘরের এক কোণে পাঠিয়ে দিলেন বাবা। পরমুহূর্তেই ঝাঁপিয়ে পড়লেন মৃত মেয়েটির শরীরের উপর, মাও যেন এই মুহূর্তটার অপেক্ষা করছিলেন। তিনিও বাবার সঙ্গে যুক্ত হলেন ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঘরের দেয়ালের সাথে প্রায় মিশে গিয়ে দৃশ্যটা দেখলাম আমি। মেয়েটার পেট কামড়ে ছিড়ে নাড়িভুঁড়ি বের করে ফেলল মা। বাবা মেয়েটার গলা, স্তন, বুক কামড়ে ছিড়তে লাগলো। 

নরম অংশ গুলো মুখে নিয়ে চিবোচ্ছে। গলার সব শক্তি দিয়ে চিৎকার করতে ইচ্ছা হলো আমার আবার, চেঁচিয়ে বলতে ইচ্ছা করল থামো এবার। কিন্তু কথা বলার উপর গুরুতর নিষেধ আছে আমার উপর। কারণ তারা জানেন আমি বোবা। আমার বাবা-মা যদি জানতে পারেন আমি বোবা নই, কথা বলতে পারি তাহলে সাথে সাথেই খুন করে ফেলবে আমাকে।অচেনা একটা নারী কণ্ঠ এই সাবধান বাণীই আমাকে দিচ্ছে অনেক বছর ধরে। তাই তাদের কাছে আমি একজন বোবা।



আর সামলাতে পারলাম না নিজেকে। মেয়েটার শরীর খণ্ড থেকে খণ্ডতর হচ্ছে। বাবা আর মা তার রক্তে ভিজে চুপসে উঠছে। এক দৌড়ে ঘরটা থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে চলে এলাম। দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে বিছানায় উঠে মাথার উপর বালিশ চাপা দিয়ে কাঁদতে লাগলাম। কখন ঘুমিয়ে গিয়েছি জানি না। 

পরদিন ঘুম ভাঙতেই দেখলাম অনেক সকাল হয়ে গেছে। ভয়ে ভয়ে দরজা খুলে বাইরে বের হলাম। পুরো বাড়ি খুঁজে না পেলাম বাবা আর মাকে না পেলাম কাজের মেয়েটির কোনো চিহ্ন।এক মুহূর্তে আমার কাছে পরিস্কার হয়ে গেল আমাদের বাড়িতে থাকা পূর্বের মেয়েগুলোর পরিণতি। 

সব সময়ের মতো আমি যাতে বাড়ি থেকে বের হতে না পারি এরজন্য  বাড়ির গেট বাইরে থেকে বন্ধ। জানলার কাছে এসে দাঁড়ালাম। কয়েকটা গাছ আর বাড়ি ঘেরা উঁচু দেয়াল ছাড়া কিছুই চোখে পড়ছে না। সেইসব চিন্তা আবার আমার মাথায় খেলা করছে। কে আমি আমার বাবা-মা এমন অদ্ভুত কেন তারা নরখাদ কেন তারা আমাকে বাইরের দুনিয়ায় নিয়ে যায় না শৈশব থেকে নয় বছর বয়স পর্যন্ত এই বাড়ির বাইরে আমি যাইনি। 

আমার বোবা সাজার পেছনের কাহিনীটা বলা যায়। শৈশবের সামান্য স্মৃতি আমার মনে পড়ে, মা আমাকে বারবার নানান শব্দ উচ্চারণ করে সেগুলো তার সাথে উচ্চারণ করতে বলতো। শব্দগুলোর অর্থ আমি বুঝতে পারতাম, উচ্চারণ করতেও পারতাম। কিন্তু যখনই মুখ নাড়িয়ে শব্দটি উচ্চারণ করতে যাই তখনই  এক অদৃশ্য হাত আমার মুখ চেপে ধরে। কোনো শব্দই আমি করতে পারি না। বাবা আমাকে রীতিমতো শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করা শুরু করতো কথা বলার জন্য। কিন্তু আমি কেঁদে ফেললেও মুখ দিয়ে একটা টু শব্দ বের করতে পারতাম না। 

আবার যখন বাবা-মা সামনে থাকে না তখন আমি আরামে শব্দ উচ্চারণ করতে পারতাম। তারা আমার কাছে আসতেই অদৃশ্য হাতটা আমার মুখ চেপে ধরতো। মনে পড়ে বাবা কতটা কঠোর স্বরে চিৎকার করে আমাকে শব্দ উচ্চারণ করতে বলতো। ভয়ে আমি কাঁপতাম। কিন্তু কিচ্ছু উচ্চারণ করতে পারতাম না। একসময় তারা ধরেই নিল আমি বোবা। 

ছোটবেলা থেকেই বাবা-মা আমাকে এক রুমে রেখে আলাদা ঘরে ঘুমায়। একরাতে একা শুয়ে আছি। হঠাৎ ঘরে কোনো একজনের উপস্থিতি অনুভব করলাম। একটা নারীর কন্ঠস্বর কথা বলে উঠল হঠাৎ। এটা মায়ের গলা নয় চিনতে পেরে শিউরে উঠলাম। কন্ঠটা শুধু আমাকে জানালো, সেই আমাকে কথা বলতে বাধা দিয়ে এসেছে। সে আমার ভালোর জন্যই এমনটা করছে। কারণ যেদিন আমি কথা বলা শুরু করবো সেদিনই আমার বাবা-মা আমাকে খুন করে ফেলবে। আমি লাফিয়ে উঠে টর্চ জ্বালালাম। কিন্তু ঘরে কাউকেই দেখলাম না। 

এরপর থেকে প্রায়ই অদৃশ্য কণ্ঠস্বরটা হঠাৎ উদয়  হয়ে আমার পিছন দিক থেকে,  আমার বাবা-মা সম্পর্কে নানা ভাবে আমাকে সতর্ক করে দিতে লাগলো। তারা যে কোনো একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে আমাকে বড় করছে তা বোঝাতে লাগলো। মাকে আমি ভালোবাসি। অদৃশ্য কন্ঠস্বর যাই বলুক আমি জানি তিনি আমার কোনো ক্ষতি করবেন না। বাবার ভয়েই কথা বলতে পারলেও এখন বোবার মতো অভিনয় করে যেতে হয় আমাকে। 

বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে আমি যতটুকু জেনেছি তা আমাদের বাড়িতে আসা কাজের মেয়েগুলোর কাছ থেকেই। মা সামান্যই বলতেন।  মায়ের ঘরের তাকে থাকা বেশ কিছু বই পড়েও জেনেছি অনেক কিছু। তারা যদিও জানে না যে আমি পড়তে জানি। সেই অদৃশ্য নারী কণ্ঠস্বরটাই আমার শিক্ষক এই বিষয়ে। 

জানলায় দাড়িয়ে থাকতে আর ভালো লাগছে না।কাজের মেয়েটিও নেই। প্রচুর ক্ষুধা লাগছে। মা কখন আসবে বুঝতে পারছি না। বাবা-মা প্রায়ই সারাদিন বাড়ির বাইরে থাকেন। খাবার টেবিলের সামনে চলে এলাম। একটা বড় থালা বোল দিয়ে ঢাকা রয়েছে দেখে কিছুটা স্বস্তি পেলাম। মা নিশ্চই খাবার রেখে গেছেন। প্লেটের উপর থেকে বোলটা সরাতেই আমার গলা ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইলো চিৎকারটা। 

কিন্তু সেই অদৃশ্য সত্তাটা চেপে ধরলো আমার মুখ। আমি ছিটকে মেঝেতে পড়ে গেলাম। প্লেটে শোভা পাচ্ছে কাজের মেয়েটির কাটা মাথা। চোখদুটো এখনো বিস্ফোরিত হয়ে তাকিয়ে আছে, মুখটা হা হয়ে আছে আতঙ্কে। আমার মুখ দিয়ে শুধু গগগগ শব্দ বের হতে লাগলো। চাপা কণ্ঠে মাটিতে মুখ গুজে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলাম। 

কোথা থেকে বের হয়ে দৌড়ে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো আমাকে। উৎকণ্ঠা নিয়ে বলল, 'আমি বলেছিলাম তোমাকে খোকা কথা বলতে শিখেনি এখনও। শুধু শুধু ওকে দিয়ে এমন পরীক্ষা নিচ্ছ! বাইরে কোথাও গেলেও ও আমাদের কথা ও কাউকে বলবে না।


আবির বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকছে আজকাল আর আমার ভয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে খেতে হয়না,মিথ্যা বলতেও হয়না। প্রেমিকার মন রক্ষায় প্রেমিকেরা যতটা সতর্ক স্ত্রীর মন রক্ষায় স্বামীদের আবার অত দায় নেই, অত খেয়ালও নেই, আবেগও নেই। 

বড় আপন করে পাওয়া এই মানুষটার সাথে এখন আর চাইলেও মন খুলে দুটো কথা বলা যায়না প্রেমিকার অহেতুক কথা শুনতে মন অস্থির হলেও বিয়ে করা বৌ এর কথা শুনতে যেন কানও সায় দেয়না।  এক ছাদের নিচে বাস করেও যেন ঠিক একসাথে থাকা হয় না, হাত বাড়ালেই ছোঁয়া গেলেও যেন হাতে হাত রাখা যায়না। একটু যত্নের অভাবে একটু একটু করে গড়ে তোলা সম্পর্ক টা যে আলগা হতে থাকে সে খবর কেউ রাখেনা

মাথা উঁচু করতেই দেখলাম কিছুটা দূরে বাবার ক্রুদ্ধ দৃষ্টি, 'মানুষের বাচ্চা ও, এত সহজে বিশ্বাস করা যায় না!' এই বলেই কাটা মাথার প্লেটটা নিয়ে চলে গেলেন বাবা। আমি শক্ত করে মাকে জড়িয়ে ধরলাম। মা বলল, ' ভয় নেই খোকা। চলো তোমাকে কিছু রান্না করে দেই।' আমি তাকে জড়িয়ে ধরে টলতে টলতে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম। 

আরেকটা অদৃশ্য হাতও যেন আমার কাঁধ স্পর্শ করে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করলো, 'ভয় নেই কোনো, খোকাক্লান্ত শরীরে এগিয়ে যাই পরম যত্নে আবিরের মাথায় হাত বুলাতে থাকি। ১০ বছরে মানুষটার কপাল বড় হয়েছে,চুল পাতলা হয়েছে, চোখে চশমার পাওয়ার বেড়েছে,শরীরে মেদ জমেছে, স্বামী থেকে দু সন্তানের বাবাও হয়েছে কত দায়িত্ব বেড়েছে এখন।আর আমি কিনা এখনো সেই কিশোরী মেয়ের মত আবেগ নিয়ে ভাবছি নিজ মনেই হেসে ফেললাম।